• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
গুজব প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

গুজব প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০২১

আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান অত্যন্ত সহজলভ্য হয়েছে। মুহূর্তেই হাজার মাইল দূরের মানুষটি হতে পারে গল্প বা আড্ডার সঙ্গী। তথ্যপ্রযুক্তির এই অবাধ প্রবাহ একদিকে মানুষের জীবনকে করেছে সহজ ও উপভোগ্য। অন্যদিকে একশ্রেণির অসাধু মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে সমাজে ছড়াচ্ছে মিথ্যা গুজব বা অপতথ্য, যা মানুষের মাঝে তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, পারস্পরিক বিভেদ। বিনষ্ট করে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা। এমনকি মানুষকে ধাবিত করে ধর্ষণ হত্যা ও গণহত্যার মত ভয়াবহ অপরাধে।

ইসলামের দৃষ্টিতে তথ্য একটি পবিত্র আমানত। প্রতিটি আমানতের ব্যপারে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। যারা সমাজে গুজব রটিয়ে বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে প্রয়াসী হয়, তারা খেয়ানতকারী, ফাসিক ও মুনাফিক। মহান রাব্বুল আলামিন এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি প্রদান করেছেন। পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত ৭৭) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের হূদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ ওদের যখন বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে অনাচার কর না, তারা বলে, আমরা তো শান্তি স্থাপনকারী। জেনে রাখ, ওরাই অনাচার বিস্তারকারী, কিন্তু ওদের চেতনা নেই’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০-১২)।

মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা যেমন অপরাধ তেমনিভাবে কোনো তথ্য যাচাই না করে প্রকাশ করাও মিথ্যার শামিল। তাই প্রতিটি তথ্য বা সংবাদ প্রকাশ করার আগে ভালোভাবে যাচাই করা হলো ইসলামের সুমহান শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা যাচাই করো, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ৬)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তাই বর্ণনা করে’ (সহিহ মুসলিম: ৯৯৬)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- ১. কথা বললে মিথ্যা বলে; ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে; ৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে (সহিহ বুখারি)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সত্যবাদিতা হচ্ছে শুভ কাজ। আর শুভ কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর বান্দা যখন সত্য বলতে থাকে, এক সময় আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত হয়। আর মিথ্যা হচ্ছে পাপাচার, পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে, আল্লাহর কাছে এক সময় সে মিথ্যুক হিসেবে গণ্য হয়’ (বুখারি : ৫৭৪৩, মুসলিম : ২৬০৭)।

সম্মানিত পাঠক! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক টুইটার হোয়াটসঅ্যাপ ইমো ম্যাসেঞ্জার বা এ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ বা শেয়ার করার আগে তার সত্যতা ও প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। অপতথ্য ছড়িয়ে অন্যের মানহানি করা, দোষচর্চা করা বা কাউকে অপবাদ দেওয়াকে ইসলাম পাপ বলে গণ্য করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজ ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন (বুখারি, মুসলিম)। তবে কারো অপরাধ যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা সমাজ, মানবতা বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে জনগণকে সচেতন করার জন্য তা প্রকাশে কোনো অসুবিধা নেই। এ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচার-প্রসার পছন্দ করেন না, তবে যার ওপর জুলুম করা হয়েছে (তার কথা ভিন্ন)’ (সুরা নিসা, আয়াত ১৪৮)। এ আয়াতের তাফসিরে প্রখ্যাত তাফসিরবিদ আল্লামা মুজাহিদ (রহ.) বলেন, নিপীড়িত জনগণের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা এবং জনসম্মুখে অপরাধসমূহ প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বৈধ।

লেখক :মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

খতিব ও প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads