• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

রমজানে খাদ্যে ভেজাল কাম্য নয়

  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২১

আসছে মাহে রমজানুল মোবারক। রোজা রাখব আমরা। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে আমরা জীবনধারণের জন্য পানাহার করব। এই খাদ্য পানীয় আমাদের দেহে পুষ্টি জোগাবে। রোগ প্রতিরোধ করে এবং সর্বোপরি আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে। বেঁচে থাকতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে ক্রয় করি। বাজারে ব্যবসায়ীগণ আমাদের উপকারের জন্য সর্বদা চেষ্টা করেন। ব্যবসা শুধুই টাকা অর্জন নয়, ব্যবসায় রয়েছে অধিক সাওয়াব। ব্যবসায়ীর থেকে ক্রয়কৃত দ্রব্যের মাধ্যমে অন্যরা উপকারী হয়। যার ফলে ব্যবসায়ীও উপকার করার সাওয়াব পেয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ।  ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ব্যবসার মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া যায়। রমজানে ব্যবসায়ীগণ রোজাদারের রোজা রাখতে বেশ উপকার করতে পারেন।  কিন্তু দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে মূল ব্যবসায়ীগণ বিভিন্ন বদনামে পড়ে যায়।  অতিরিক্ত টাকা অর্জনের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবসায়ী নীতি ভুলে রোজাদারদের ধোঁকা প্রতারণা দিয়ে ব্যবসাকে নষ্ট করে ফেলছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই সকল ধোঁকাবাজ ব্যবসায়ীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দল থেকে বহিষ্কার হবে।

সহিহ বুখারি শরিফের বর্ণনায়  পাওয়া যায়, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ধোঁকা দেয় ও প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ অবৈধ ব্যবসায়ীরা রোজাদারদের সাহরি আর ইফতারির খাদ্যে ভেজাল মিশায়ে বিক্রি করে। যার ফলে রোজাদার নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। খাদ্যে ভেজাল মিশানোর ফলে আজ ডায়াবেটিস মহামারীর মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি বৈকল্য, চর্মরোগ ইত্যাদি ব্যাধি মানুষের দেহে বাসা বেঁধে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবৈধ রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পবিত্র খাদ্যকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর বস্তুতে পরিণত করা গর্হিত কাজ। এই কাজ শয়তানের অনুসরণকারীরা করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু রয়েছে তোমরা তা খাও, আর তোমরা শয়তানের অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-১৬৮)

ভেজালদ্রব্য কিংবা দোষযুক্ত দ্রব্য বিক্রি করা ইসলামের দৃষ্টিতে বিধিসম্মত নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দোষযুক্ত জিনিস বিক্রি করল অথচ ক্রেতাকে তা অবগত করলো না সে সর্বদা আল্লাহর ক্ষোভে পতিত থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ) অনুমোদিত সংরক্ষক ব্যতিরেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা প্রতারণার শামিল। যারা প্রতারণা করে তারা ইসলামের দলভুক্ত নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। (বুখারি) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একদিন এক ব্যক্তিকে দুধে পানি মেশাতে দেখে বললেন, কিয়ামতের দিন তোমাকে দুধ থেকে পানি পৃথক করতে বলা হবে, তখন তোমার কি উপায় হবে? রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি করবে সে আমাদের নয়। কূটকৌশল ও প্রতারণা জাহান্নামে যাবে।’ (তাবরানী)

খাদ্যে ভেজালের পাশাপাশি চলছে মাহে রমজানে রোজা মুখে অন্য রোজাদারকে পণ্য দেওয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া। কোনো খাদ্য ওজনে জালিয়াতি বা কম দেওয়ার ব্যাপারে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করে বলেন, কোনো জাতির মধ্যে ওজনে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে অবশ্যই তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শয়তানের নিপীড়ন এসে পড়বে।’ (ইবনে মাজাহ) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘ওজন কম এবং উপাদান সঠিক মাত্রায় না দিলে আল্লাহ সে সমাজের জীবিকা সংকুচিত করে দেন।’ (আত-তারগীব খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা নং-৩০) আসুন আমরা যারা ব্যবসা করছি হালাল উপায়ে ব্যবসা করি। খাদ্যে কখনো ভেজাল করব না আর ওজনে কখনো কম দেব না। মনে রাখতে হবে আমি যদি ভেজাল করি তাহলে আমাকেও যে কোনো ভেজালে পড়তে হবে। আর অল্প দামে ভেজালদ্রব্য ক্রয় করবেন না। কেউ খাদ্যে ভেজাল করলে অবশ্যই তাকে বুঝিয়ে তুলেন যেন খাদ্যে ভেজাল তৈরি না করে। কেননা খাদ্য হচ্ছে পবিত্র জিনিস। আর আমরা সেই পবিত্র জিনিস রিজিক হিসাবে আহার করি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে দান করেছি, তা হতে আহার করো এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-১৭২)

লেখক : মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads