• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা প্রতিরোধে তওবা ও সচেতনতা

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

করোনা প্রতিরোধে তওবা ও সচেতনতা

  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী একটি আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। যার দুঃসংবাদ দেখা যায় সংবাদপত্রের পাতায় পাতায়। শোনা যায় খবর অসংখ্য লাশের। বিশ্বজুড়ে বয়ে যায় ভয়ের ঝড়। চারদিকে লকডাউন। মাদরাসা, স্কুল, ভার্সিটিসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ তালাবদ্ধ। মিল, কারখানা, ফ্যাক্টরিসহ শ্রমিকের সকল উপার্জনের খাত বন্ধ প্রায়। থমকে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল উন্নয়নের অবিরাম পথচলা। এ যেন নীরব নিস্তব্ধ এক পৃথিবী। এই আতঙ্কময় মহামারী করোনাভাইরাস মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের গজব ছাড়া আর কিছু নয়। যার উৎপত্তি চীন দেশের উহান প্রদেশে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এই গজব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় দেশে। বর্তমান বিশ্বে এ মহামারী করোনাভাইরাস এক আতংক ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যেটিকে আমরা কোরআনের ভাষায় বলতে পারি, মানুষের কৃতকর্মের ফল। দুনিয়ায় মানুষ জীবনের পথচলার মাঝে বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়। আর এই বিপদ-আপদ মানবজাতির ওপর কেন আসে? এর জবাবে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এলো, যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ, তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে এলো! (হে নবী) আপনি বলে দিন, এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান ১৬৫)। অন্য আয়াতে কারিমায় ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মফল। তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।’ (সুরা আশ্-শূরা : ৩০)। পবিত্র কোরআন মাজিদে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা আর রুম, আয়াত : ৪১)

মানুষের বেহায়াপনার কারণেও মহামারী কিংবা বিপর্যয় অবতীর্ণ হয়। মানুষ যখন নাফরমানি করতে থাকে এক আল্লাহর সাথে, অশ্লীলতার কালো ছায়া যখন তাদেরকে ঢেকে ফেলে, তখন তাদের ওপর নেমে আসে আজাব বা মহামারী। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখনই কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে; এমনকি  তারা প্রকাশ্যে নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড করতে থাকে, তখন অবশ্যই তাদের মাঝে এমন নতুন নতুন মহামারী এবং যন্ত্রণাকর ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা তাদের অতীতের কারো মাঝে কখনোই দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ)

চলমান মহামারী করোনাভাইরাসসহ যে কোনো কঠিন বিপর্যয় মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ ও পরীক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কিছু ভয় ও ক্ষুধা, জান ও মাল এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (হে পয়গম্বর!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সুরা বাক্বারাহ ১৫৫)। হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি উত্তরে বলেন, মহামারী একটা আজাব, আল্লাহ যার ওপর ইচ্ছা পাঠান। তারপর আল্লাহ তায়ালা মহামারীকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন। কোনো বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে অবস্থান করে, ধৈর্য ধারণ করবে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় থাকবে; এবং এই বিশ্বাস রাখবে- আল্লাহ তায়ালা যদি তার তকদিরে লিখে না থাকেন, তাহলে মহামারী তাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমপরিমাণ প্রতিদান। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৬১৯, ৫৭৩৪; মুসনাদে আহমদ ২৬১৮২)

আমাদের সবার বিশ্বাস করা উচিত যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। এটা প্রকৃত ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরে অবস্থান করো, তবু। বস্তুত তাদের কোনো কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয় তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। বলে দাও এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কী হবে যারা কখনো কোনো কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।’ (সুরা নিসা- ৭৮)

আমাদেরকে ইবাদতে নিমগ্ন থাকতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাসসহ মহান আল্লাহ তায়ালার যে কোনো গজবের মোকাবিলা করার শক্তি কারোর নেই। আল্লাহ যখন কারো ওপর শাস্তি দেওয়ার ফায়সালা করেন তখন কেউ তাকে আটকাতে পারে না।

কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো জাতির ওপর বিপদ চান, তখন তা ঠেকানোর কেউ নেই। তিনি ছাড়া তাদের আর কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ (সুরা আর রা’দ : আয়াত ১১)। অথচ ইদানীং গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে কতিপয় মানুষ ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করে করোনা রোগের শেফা বা আরগ্যের কারণ হিসেবে তুলে ধরছে। যা সম্পূর্ণ গুজব ও শিরক যা ইসলাম পরিপন্থী। মহাবিপদের সময় ঈমান টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। অতএব করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহমুখী ও সচেতন হওয়া বেশ জরুরি। চলমান ভাইরাসসহ প্রতি বছর যেসব বিপদ ও বিপর্যয় আসে, তা মুসলমানদের তওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে। নিজেকে শুধরে নিতে ও সতর্ক হতে নির্দেশ দেয়। তাই আল্লাহর এ আজাব ও গজব থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলসহ সবার আল্লাহর দরবারে তওবা ও ইস্তিগফার করা কর্তব্য। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে, তাদের প্রতিবছর একবার বা দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়? এরপরও তারা তওবা করে না, উপদেশ গ্রহণ করে না!’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৬)। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন, ‘এবং তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)। আমাদেরকে করোনা থেকে মুক্তি পেতে নফসকে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং বেশি বেশি তওবা করতে হবে করোনার মালিক করুণাময়ের দরবারে। তবেই পাওয়া যাবে করোনা থেকে মুক্তি।

ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আল্লাহ তায়ালা এমন নন যে, আপনি তাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল : ৩৩)

কোরআন ও হাদিসের আলোকে সচেতনতা : কোরআন ও হাদিসে সচেতনতা সম্পর্কে বহু বাণী রয়েছে। যেমন নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, যা আল্লাহ মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তওবা ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা-২২২)। সব সময়ের জন্য পরিধানের কাপড় পাক পরিচ্ছন্ন রাখা। কোরআনের বাণী- ‘তোমরা কাপড় পরিচ্ছন্ন রাখ।’ (সুরা মুদ্দাছির-৪)। সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো।’ (সুরা নিসা-৭১)। শারীরিক সুস্থতার জন্য সচেতন হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে।’ (বুখারি হাদিস নং : ১৯৬৮)। প্রয়োজনে আমাদের লকডাউনে থাকতে হবে। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- ‘যদি তোমরা শুনতে পাও কোনো জনপদে প্লেগ কিংবা অনুরূপ মহামারীর প্রভাব ঘটে তবে তোমরা সেখানে যাবে না। আর যদি তোমরা সেই জনপদে অবস্থান করছ, তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ (বুখারি, হাদিস নং ৫৩৯৬)। মহামারী রোধে প্রয়োজনে আমাদের আইসোলেশন মানতে হবে তথা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘অসুস্থের কাছে নেওয়া হবে না। (বুখারি, হাদিস নং ৫৭৭১)। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কুষ্ঠরোগীর সাথে হাত মিলিও না।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২২৩১)

পরিশেষে বলব, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত লকডাউনের এ দিনগুলোতে সাধ্যানুযায়ী গরিব অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। এ মহৎ কাজের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- ‘এতিমদের খাদ্য দান করো দুর্ভিক্ষের দিনে, আত্মীয়স্বজনদের অথবা ধুলামলিন মিসকিনকে।’ (সুরা আল বালাদ, আয়াত : ১৪-১৬)। আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমাদের সবাইকে মাফ করে দিন। এই মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমিন।

লেখক :এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ

কবি ও গল্পকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads