দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালা সবকিছুর একটা মৌসুম দিয়েছেন। মৌসুমে সেই জিনিসটা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। আল্লাহ ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও মুমিনদের একটা মৌসুম দিয়েছেন আর সেই সময়ই হচ্ছ রমজান মাস। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন বান্দার অন্তর সদাসর্বদা উদগ্রীব থাকে মহান আল্লাহ নৈকট্যলাভের জন্য। ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আযকার, পরকালীন পাথেয় অর্জনের এক উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে রমজান মাস। এই সময়ে বান্দা তার যাবতীয় জাগতিক চাওয়া-পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে, অতীতের সব পাপাচার পরিত্যাগ করে ইমানি জিন্দেগির উত্তাপ গ্রহণ করবে, তাকওয়া অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত-ইতাআতের শক্তি সঞ্চয় করবে, চিন্তাচেতনায় ও কর্মসাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে। মহান আল্লাহ বান্দাদের তার নৈকট্যলাভের জন্য বহু নেক আমলের সুযোগ রেখেছেন এই মহামান্বিত এই মাসে।
সিয়াম সাধনার মাস : মুসলিম উম্মাহর নিকট রমজান মাসের আগমন ঘটে সিয়াম পালনের আগমনী বার্তা নিয়ে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হলো (আসল) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মূর্খতা প্রদর্শন করে, তাহলে তুমি (তার প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বল যে, আমি রোজা রেখেছি, আমি রোজা রেখেছি।” (সহিহ ইবনে হিববান, আলবানী-৫৩৭৬) আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবলাভের আশায় রমাজান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবলাভের আশায় ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবলাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ‘ইবাদতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
কোরআন নাজিলের মাস : পবিত্র এই রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা হেদায়াতের পথ ও নির্দেশিকা হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীম নাজিল করেছেন। এই রমজান মাস কিন্তু আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের জীবনেও ছিল। তখন রমজান মাস এতটা মর্যাদাবান ও মহামান্বিত ছিল না। রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ায় এই মাসের মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিয়ামত যত মূল্যবান, তার হক আদায় করার দায়িত্বও তত ভারি। আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে রহমত ও বরকতের জিনিস। এই কিতাব মানুষের গোপন, প্রকাশ্য, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সব ব্যধির ব্যবস্থাপত্র। গভীর অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়া লোকের আলোর মশাল। তাই এই কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজানে একটু প্রধান হক হচ্ছে-কোরআন পড়া, কোরআন বোঝা, কোরআন অনুযায়ী আমল করা ও অন্যকে এর দাওয়াত দেওয়া কোরআন তিলাওয়াতকারীর ফজিলত বর্ণনা করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শিখে ও অপরকে তা শেখায়।’ (বুখারি, হাদসি নং-৫০২৭)
ক্ষমালাভের অফুরন্ত সুযোগ : রহমতের এই মাসে আল্লাহতায়ালা তার অগণিত বান্দাগণকে ক্ষমা করে থাকেন। বছরে আর এমন কোনো মাস নেই, যে মাসে মহান আল্লাহপাক তার এতো বান্দাগণকে ক্ষমা করে থাকেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (রমাদানে) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।’ (আহমাদ, হাদিস নং-৭৪৫০)
তারাবির সালাত : রমজান মাসের এই সালাতগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ নেকি অর্জন করতে পারি। অন্যদিকে তা আমাদের গুনাহ থেকে মুক্তিলাভের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই নামাজের মর্যাদা ঘোষণা করে নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে (তারাবির সালাত) আদায় করবে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস নং-৩৭, মুসলিম, হাদিস নং-৭৩৮)
লাইলাতুল কদর : এই মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদরের মহামান্বিত রজনী। এই এক রাত্রির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও বেশি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর, আয়াত-৩) হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস নং-১০৯১, মুসলিম, হাদিস নং-৭৬০)
লেখক :মেহেদী হাসান সাকিফ
প্রাবন্ধিক
