• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
রোজার সূচনা ও ইতিহাস

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

রোজার সূচনা ও ইতিহাস

  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০২১

ইসলামের পঞ্চ-স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো রোজা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। রোজা শুধু আমাদের ওপর ফরজ করেছেন তা কিন্তু নয় বরং আমাদের পূর্ববর্তী সবার ওপরই রোজার বিধান ছিল। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর ওপর রোজার বিধান আরোপ করে মানবেতিহাসে সর্বপ্রথম রোজার প্রচলন শুরু করেন এবং আমাদের পূর্ববর্তী সব নবী ও উম্মতের ওপরও রোজার বিধান আরোপ করা হয়েছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলূসী (র.) স্বীয় তাফসির গ্রন্থ ‘রুহুল মাআনী’-তে উল্লেখ করেছেন, উপরোক্ত আয়াতে ‘মিনক্বাবলিকুম’ দ্বারা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুলের জামানা বোঝানো হয়েছে।

কোরআন ও হাদিস গবেষণা করলে রোজার ইতিহাস সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রেরণ করে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ এক ধরনের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। এ ব্যাপারে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ইরশাদ করেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং সেখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তসহ খেতে থাক; কিন্তু তোমরা এ গাছের কাছে যেয়ো না (যদি যাও বা তার ফল ভক্ষণ করো), তাহলে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (সুরা বাকারা, আয়াত-৩৫)।

মুফািসরীনে কেরাম বলেন, এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম রোজা। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনার শিকার হয়ে ওই গাছের ফল ভক্ষণ করেছিলেন এবং এর পরিণামে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ভূপৃষ্ঠে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর তারা উক্ত ভুলের জন্য যারপরনাই অনুতপ্ত হন, তাওবা ইস্তিগফার করেন এবং এর কাফ্ফারাস্বরূপ ধারাবাহিক চল্লিশ বছর রোজা রেখেছিলেন। হজরত আদম (আ.)-এর পর অন্য সব নবী-রাসুলের জামানায়ও রোজার বিধান ছিল। তবে তাদের রোজা পালনের পদ্ধতি ভিন্নতর ছিল। হজরত নূহ (আ.)-এর ওপরও রোজা ফরজ ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হজরত নূহ (আ.) ১ শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন (ইবনে মাজাহ) হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি ত্রিশ দিন রোজা রেখেছিলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওপর ওহী নাজিল করলেন এবং আরো দশ দিন রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) বছরজুড়ে প্রতিদিন রোজা রাখতেন। হজরত দাউদ (আ.) একদিন পর পর রোজা রাখতেন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করার পর শুধু আশুরার রোজা রাখতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করে দেখলেন, মদিনার ইহুদিরা মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আজ তোমরা কীসের রোজা রাখছ? উত্তরে তারা বলল, আজ সেই দিন, যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার কওমকে ফিরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন আর ফিরাউনকে সদলবলে নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ এই দিন মুসা (আ.) রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিন রোজা রাখি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের থেকে মুসা (আ.) অনুসরণের অধিক হকদার। এরপর তিনি আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন (বুখারি, মুসলিম)। সর্বোপরি ১০ শাবান দ্বিতীয় হিজরিতে মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজা ফরজ মর্মে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাহে রমজানের রোজাগুলো সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাসিল করার তওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক :মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads