• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রোজা ও তারাবি

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রোজা ও তারাবি

  • প্রকাশিত ১৪ এপ্রিল ২০২১

সুখ-শান্তি ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের কেন্দ্রস্থল আল্লাহ প্রদত্ত ইসলাম, যার প্রতিটি বিধান কল্যাণকর মানব-দানব সবার জন্য। আধুনিক প্রগতিশীলরা পাশ্চাত্য ও ইউরোপের রঙিন চশমা পড়ে খুঁজতে থাকে ভুলভ্রান্তি। ফলাফলে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে ইসলামে এমন সংখ্যা কম নয়। তাই তো কালের পালাবদলে ইসলামের নোঙর ফেলেছে পৃথিবীর দুয়ারে দুয়ারে। প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে ইসলামের সৌন্দর্য ও নানাবিধ কল্যাণ।

রোজা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি, যা বান্দার প্রতি আল্লাহ  আবশ্যক  করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে নেতিবাচক ধারণার নেই কমতি। গর্ব করেই বলতে হয়, আধুনিক যুগের চিকিৎসাবিজ্ঞান রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করে তার সত্যতা প্রমাণ করেছে। ইউরোপের ঘরে ঘরে ইদানীং রোজা রাখার হিড়িক পড়েছে। সবার মুখে শোনা  যাচ্ছে- শরীরটাকে ভালো রাখতে চাও তো রোজা রাখ, জার্মানির স্বাস্থ্য ক্লিনিকের ফটকে বড় অক্ষরে টাঙানো আছে রোজা রাখ স্বাস্থবান হবে, নিচে লেখা মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ। এছাড়া অন্যান্য খ্রিস্টান চিকিৎসক রোজার উপকারিতা নিয়ে বেশকিছু গবেষণা চালিয়েছে।

বিখ্যাত সিরাতের কিতাব সিরাতে হালাবিয়াতে বর্ণিত আছে, মুসলমানের চিকিৎসায় মিশরের সম্রাট মুকাউকাস একজন ডাক্তার পাঠান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, আমরা এমন এক জাতি যারা ক্ষুধা লাগলে খায় না। খেলেও ক্ষুধা বাকি থাকতে খাওয়া ত্যাগ করি। আর পেট ভর্তি করে খাওয়া অপেক্ষা মানুষের জন্য মন্দ দ্বিতীয় কোনো কাজ নেই। আদম সন্তানের টিকে থাকার জন্য কয়েক লোকমাই  যথেষ্ট। যদি তা না করে তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি, এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখে (ইবনে মাযাহ)। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয় বরং পরিমিত খাওয়াটাই দীর্ঘ জীবন লাভের চাবিকাঠি।

বছরে এক মাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়।

এটা অনেকটা শিল্পকারখানার মতো। এতে মেশিনের আয়ুকাল বাড়ে এবং মানবদেহের যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আধুনিক পৃথিবীতে রোজার প্রতি চেতনা সৃষ্টি করার পেছনে সত্তর দশকের একটি বই অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। বইটি হচ্ছে, বিখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদের ঞযব ংবপৎবঃ ড়ভ ংঁপপবংংভঁষ. অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য।

তিনি বলেছেন মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালি বিশ্লেষণ করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরে কিছুদিন উপবাসের অভ্যাসের কথা। তার মতে, উপবাস খাবারের উপাদান থেকে সারা বছর জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) চবি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি দেয়।

ফলে শরীরে জমে থাকা বিষগুলো রমজান থেকে নির্গত অর্থে অগ্নিদগ্ধ হয়। তা ধ্বংস না হলে শরীরের রক্তচাপ অ্যাকজিমা, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগ জন্ম নেয়। এছাড়া উপবাসে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

মিশরের জাতীয় গবেষণাগারের প্রাণ-রসায়ন শিক্ষিক ডাক্তার মোহাম্মদ সাইয়েদ বলেন, অনেকে বলেন রোজা রাখলে শরীর দুর্বল হয়, মাথা চক্কর দেয় কিংবা ঘুমের প্রকোপ বেশি হয় ।

তিনি সেটা ভুল প্রমাণ করেন। রোজার মধ্যে দিনে খাদ্য গ্রহণ না করলে শরীরের ভেতর খাদ্য প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। প্রতিরোধ ক্ষমতা আলফা-১ও গামা নামক প্রোটিন থেকে বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যালসিয়ামকে জমতে বাধা দেয়। আর ক্যালসিয়াম জমেই সৃষ্টি হয় পাথর। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, রমজানের দিনে তা গঠিত হতে পারে না। একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে-সিনা রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন। ইসলামের একটি কল্যাণকামী বিধান রোজা নিয়ে ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার মুয়াযযমের মানব শরীরের ওপর রোজার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রোজা মানব শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। কেবল সামান্য ওজন কমায়। যারা মনে করেন রোজা দ্বারা শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এই ধারণা নিতান্তই  অবাস্তব। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলে বাড়ে। এই অতীব সত্য কথা না জেনে অনেক ডাক্তার শূলবেদনা রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন।

পবিত্র রমজানের অন্যতম একটি ইবাদত তারাবি নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণাও থেমে নেই।

মিশরের শিক্ষিকা ডাক্তার সালওয়া রুশদি ৬০ বছরের বেশি বয়সি নারী-পুরুষের ওপর চার বছরব্যাপী এক মাস করে গবেষণা করে দেখেছেন তারাবি নামাজ হূৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও শরীরের পেশিকে মজবুত করে।

মেরুদণ্ডসহ অন্যান্য জোড়াকে সহজ করে এবং রক্তপ্রবাহকে অধিক ক্রিয়াশীল করে। তারাবিতে বেশি রুকু ও সিজদার ফলে রক্ত চলাচল ও শ্বাস গ্রহণ প্রক্রিয়ার মান বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা আরো বলেন, পিঠে জয়েন্টে ও মাংসপেশিতে যত ব্যথা থাকুক তার উচিত তারাবি পড়া। এভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধান নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসুন, রমজানের প্রথম আবহে জীবনের সফলতা লাভের  উদ্দেশ্যে  রোজা রাখার নিয়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। আর এতেই নিহিত আছে মানুষের আরোগ্য লাভের গোপন রহস্য। ফলে সিয়াম সাধনায় আমরা হব স্বাস্থ্যবান ও পবিত্র আত্মার অধিকারী। আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও তারাবি ভালোভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :মুহাম্মদ মিযানুর রহমান

প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads