• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০২১

মা-বাবা সন্তানের জন্য আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। দুনিয়ার বুকে সন্তানের জন্য মাতা-পিতার চেয়ে বড় আপন আর কেউ নেই। মাতা-পিতা আমাদের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা, শৈশব-কৈশোর-যৌবন সবসময় আমাদের  প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। শৈশবে আমাদের লালন-পালন করতে মা যে কত কষ্ট করেন তা বর্ণনাতীত। আর বাবা আমাদের ভরণ-পোষণসহ জীবনধারণের সবকিছুর জোগান দেন। সন্তানের জীবনে মা-বাবা এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের লালন-পালন থেকে শুরু করে সারাজীবন মা-বাবা আমাদের জন্য কত যে কষ্ট সহ্য করেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই পরম মমতাময়ী মা-বাবার প্রতি সন্তানদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সে সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র  কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত তোমরা করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলনা এবং তাদেরকে ভর্ৎসনা করনা। তাদের সাথে কথা বলো সম্মানসূচক নম্রভাবে। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বল, হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন পালন করেছিলেন। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত- ২৩, ২৪)

মাতা-পিতা আমাদের নিকট সবচেয়ে বেশি সদাচরণ পাওয়ার হকদার। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললোঃ অতঃপর কে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মা। সে বললো. অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার বাবা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আর সন্তাদের উচিত এমন কোনো কথা না বলা, এমন কোনো কাজ না করা, এমন কোনো আচরণ না করা যাতে মাতা-পিতা মনে কষ্ট পায়। মাতা-পিতার সাথে সবসময় সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাদেরকে কখনো গালি দেওয়া যাবে না। এমনকি অন্যের মা-বাবাকেও কখনো গালি দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আম্র (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লা’নত করা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কীভাবে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেন, সে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ৯০, আহমাদ, হাদিস নং-৬৫৪০)

মাতা-পিতার সব আদেশ-নিষেধ (শরিয়তবিরোধী নয়) মেনে চলা সন্তানের জন্য অপরিহার্য। আর মাতা-পিতার নাফরমানি বা অবাধ্যতা করা কবীরা গুনাহ। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবীরা গুনাহর কথা উল্লেখ করলেন অথবা তাঁকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মানুষ হত্যা করা ও মা-বাবার নাফরমানি করা।’ আবার মাতা-পিতা যদি অমুসলিমও হয় তবুও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেমন হজরত আসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশরা যে সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ওই চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো। (বুখারি ও মুসলিম) অতএব, আমাদেরকে পরম মমতাময়ী সে মাতা-পিতার সাথে সবসময় ভালো আচরণ করতে হবে। তাদের খেদমত করতে হবে। তাদেরকে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে হবে। আর কখনো তাদের অবাধ্যতা করা যাবে না। তাদের জন্য সবসময় দোয়া করতে হবে। আল্লাহ সে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন ‘রাব্বীর হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগিরাহ’।

মো. জোবাইদুল ইসলাম

লেখক : শিক্ষার্থী, সুফিয়া নুরিয়া ফাজিল মাদরাসা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম

mdjobaidulislam04@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads