• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

রমজানে ইবাদত হোক লৌকিকতামুক্ত

  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০২১

স্বাগতম রমজানুল মোবারক। রহমতের ফোয়ারা, মাগফিরাতের পায়গাম আর নাজাতের খোশখবর নিয়ে এসেছে মাহে রমজান। এ মাসে মুমিনদের ঘরে ঘরে জ্বলে উঠে ইবাদতের নুর। সে নুরের ছোঁয়ায় নুরান্বিত হয় ছোট-বড়, বয়স্ক-বৃদ্ধ সকলেই। মুসলিমদের প্রায় প্রতিটি ঘরই প্রাণবন্ত হয় ইবাদত বন্দনায়। সাহরি, ইফতার, তারাবি, তেলাওয়াত, দান-সাদকাসহ আরো অনেক ইবাদত। এ ইবাদতের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ। রহমতপ্রাপ্তি। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি। মূলত মানব-দানবকে সৃষ্টিই করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতরে জন্য।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬) আয়াত থেকে দুটো বিষয়ের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এক. সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য স্রষ্টার ইবাদত। দুই. ইবাদত শুধু স্রষ্টার জন্যই। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তারা যেন এ ঘরের রবের ইবাদত করে।’ (সুরা কুরাইশ, আয়াত-৩) এখানেও আল্লাহতায়ালা ইবাদতের নিরঙ্কুশতার বার্তা দিয়েছেন। সুতরাং ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ভিন্ন অন্য কিছুর সংযুক্তি ইবাদত নষ্টের কারণ। যেমন নিজ ইবাদতের কথা অন্যর কাছে প্রকাশ। অন্যের মুখে নিজের প্রশংসার প্রয়াস ইত্যাদি। সাধারণত মুমিনগণ এমনটি করে না। তবে অনেকেই শয়তানের প্ররোচনা এবং মানবীয় দুর্বলতার কারণে এমন গর্হিত কাজ করে বসে। এর কিছু বাস্তব চিত্র প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যক্তি আমল প্রচারিত হচ্ছে। অনেকে ইচ্ছা করেই এমনটি করছেন। এর অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া সম্ভব। একজন রমজানে কোরআন তেলাওয়াত করছেন; সেটা ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে। আমি এখন তেলাওয়াত করছি! এইমাত্র জায়নামাজ থেকে উঠে সাহরি খাওয়া শেষ করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, তারাবি শেষ করলাম! আজ এতো জনকে ইফতারি দিলাম! কবর-কুরবানীতেও কিছু মানুষ সেলফি দিচ্ছেন! অমুককে শেষ বিদায় দিলাম। এটা আমাদের কুরবানি। আরো কত কি? আশ্চর্য! এসব আমল কি দুনিয়াবাসীকে জানানোর জন্য?

সেদিন এক ভাই পোস্ট দিয়েছেন; আজ শেষ রাতের মোনাজাতে যাকে বলার তাকে সব বলে দিয়েছি! রাতের ইবাদত নিজের একান্ত বিষয়। এটা প্রচারের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। অসহ্য হয়ে তাকে রিপিট করেছিলাম। পরে অবশ্য পোস্টটি ডিলিট করেছেন। আজকালতো ওয়াজ নসিহতেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছ। ২ ঘণ্টার বয়ান। কাটছাঁট করে সাজিয়ে গুছিয়ে আকর্ষণীয় অংশটুকু নির্বাচন। তারপর নিজেই শিরোনাম দিচ্ছেন; যে ওয়াজে কাঁদলেন অমুক এলাকাবাসী। ইত্যাদি ইত্যাদি।

ইবাদতের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকাতা ও প্রথা পালন পরিহার করা জরুরি। সে এমন করেছে সুতরাং আমাদেরও করতে হবে। ওরা ইফতার পার্টি করছে, আমরা না করলে কেমন হয়? মৃতদের জন্য অনুষ্ঠান না করলে মানুষ সমালোচনা করবে ইত্যাদি। অতীত এবং বর্তমানের আহলুল্লাহ যারা, তারা কেউ এমন প্রচারনাপূর্ণ আমল পছন্দ করেন না। হ্যাঁ! যদি কারো আমল প্রচার প্রচারনা দেখে অন্য কেউ অনুপ্রাণিত-উৎসাহিত হয়, তবে সেটা প্রকাশের সুযোগ আছে। কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে এতে তার অন্তরাত্মা কতটুকু রিয়া-সুমা থেকে নিরাপদ? অন্যকে উৎসাহ দিতে গিয়ে নিজের ভাব-তরঙ্গ কেমন হচ্ছে? শামসুল হক ফরিদপুরী (রা.) এর জীবনীতে প্রমাণ মিলে। একবার তিনি কোনো এক স্থানে শায়েখের অনুমতি ছাড়া বয়ান করেছিলেন। এর শাস্তিস্বরূপ শায়েখ ছয় মাস কথা বলা নিষেধ করেছিলেন। শাস্তি এ জন্য দিয়েছিলেন যেন নিজ আমলে আত্মগর্ব না হন। শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) তা পালন করেছিলেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লোকসমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে নেক আমল করে আল্লাহ তার কৃতকর্মের উদ্দেশ্যের কথা কেয়ামতের ময়দানে লোকদের শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজ লোক দেখানোর জন্য করে আল্লাহ তার উদ্দেশ্যের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দেবেন (অপদস্থ করবেন)। (মুসলিম, হাদিস নং-৭২০৬) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ এ শ্রেণির মানুষদের বললেন তোমরা যে উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে তা তোমাদের অর্জন হয়েছে। সুতরাং আমার কাছে তোমদের কোনো বিনিময় নেই। আকাবির ও আসলাফের অসংখ্য ঘটনা বর্ণিত আছে। নিজেদের গোপন আমল কোনোভাবে প্রকাশ পেলে তারা খুবই লজ্জিত অনুতপ্ত হতেন। তাই আমাদের ইবাদত হোক নিভৃতে নির্জনে। একান্তে নিরিবিলিতে। ইবাদত হোক শুধুই মালিকের সন্তুষ্টির তরে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।’ (সুরা ফাজর, আয়াত-২৮) সুতরাং এ পথের পাথেয় হলো আনুষ্ঠানিকতা ও লৌকিকতামুক্ত ইবাদত করা। নিজের মনোবল বাড়িয়ে গোপনে ইবাদত করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : হাসান মুরাদ

খতিব, ভিমরুল্লা শাহী জামে মসজিদ, চুয়াডাঙ্গা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads