• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহরই নেয়ামত

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহরই নেয়ামত

  • প্রকাশিত ২১ এপ্রিল ২০২১

সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহরই নেয়ামত।  সুস্থতা যেমন আল্লাহর নেয়ামত ঠিক তেমনি অসুস্থতাও আল্লাহর নেয়ামত। বাংলায় একটা প্রবাদবাক্য আছে, ‘সুস্থতাই সকল সুখের মূল’। সুস্থতা মহান আল্লাহপাকের এক বিশেষ নেয়ামত। যা আল্লাহতায়ালা বান্দাদের দান করে থাকেন। কেননা সুস্বাস্থ্য মুমিনের জন্য রহমতস্বরূপ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একজন ভগ্ন স্বাস্থ্যবান মুমিন থেকে স্বাস্থ্যবান মুমিন আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ ও প্রিয়’। অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। নিয়ামত দুটি হলো; ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’। (সহিহ বুখারি) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, অবশ্যই মানুষকে সুসাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয় নি। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং-১০৭২) ইবাদতে মনোনিবেশের জন্য দেহ ও মনের সুস্থতা প্রয়োজন অনিস্বীকার্য। যে কারণে ইসলাম সুস্থ থাকার উৎসাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন বেশি কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৬৯৪৫)

সুস্থতা যে কতো বড়ো নেয়ামত তা একজন অসুস্থ ব্যক্তিই ভালো জানে। একবার চলে যান যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হসপিটালে! গেলে বুঝতে পারবেন সুস্থতা যে কত বড় নেয়ামত সেখানে গেলে কঠিন হূদয়ও নরম হয়ে যায়। কারণ, হসপিটালে এমন কিছু রোগী আছে যেগুলো দেখলে নিজের প্রতিটা অঙ্গের কথা অটোমেটিক স্মরণ  হয়ে যায়! মনে হয়ে যায়, আমার আল্লাহ আমাকে কত সুখে রেখেছেন কতটা সুস্থ রেখেছেন। কতো ধরনের  নেয়ামত দ্বারা ভরপুর করে রেখেছেন।

ঠিক তেমনিভাবে অসুস্থতাও আল্লাহতায়ালার নেয়ামত। বিভিন্ন হাদিসে রোগ-শোক ও বালা-মুসিবতের তাৎপর্য ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থতা দেহের জাকাতস্বরূপ। এর দ্বারা শরীর গুনাহমুক্ত হয়, পাক-পবিত্র হয়। আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বুলন্দ হয়। ভবিষ্যত জীবনের জন্য উপদেশ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন বিপদগ্রস্ত লোকদেরকে যে মহাপুরস্কার দেওয়া হবে তা দেখে আফিয়াতের অধিকারী লোকেরা কামনা করবে, হায়! দুনিয়াতে যদি তাদের দেহ কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হতো (আর তার বিনিময়ে আখেরাতের এ মহাপুরস্কার লাভ হতো)।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস নং-২৪০২) অসুস্থতা মুমিনের জন্য গজব নয়, বরং নেয়ামতস্বরূপ। মুমিনের কাছে যখন অসুস্থতা আসে আর সে ধৈর্য ধরে তখন এর ফল অসাধারণ হয় আল্লাহর পক্ষ হতে। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৫৬)

আমাদের ভাবতে হবে সুস্থতা-অসুস্থতা উভয়টি আল্লাহর নেয়ামত। আমাদেরকে এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আমরা অনেকে এরকম করি যে, যখন অসুস্থ থাকি তখন আল্লাহকে প্রচুর স্মরণ করি, গোনাহ করা ছেড়ে দেই, চুপ থাকি, মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করি। আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি। তখন আমরা সুস্থতার কদর বুঝি এবং নিয়ত করি সুস্থতার শুকরিয়া আদায় করবো। ঠিকমতো নামাজ পড়বো। আল্লাহর হুকুম মেনে চলবো। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় আমাদের মাঝে তা দেখা যায়না। আমরা সুস্থ হলে আল্লাহকে ভুলে যাই। আবার গোনাহ করা শুরু করি। মানুষকে কষ্ট দেই। সমাজে অনেককে দেখা যায়, যারা অসুস্থ হলে বুযুর্গ হয়ে যায়। প্রতিবেশীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহওয়ালা হয়ে যায়। কিন্তু তারা যখন আবার সুস্থ হয়ে যায় তখন শুরু হয়ে গোনাহের দরজা, মানুষকে কষ্ট দেওয়া। তখন আর আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়ার কথা ভুলে যায়। এজন্যই আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষকে যখন বিপদ স্পর্শ করে তখন শুয়ে-বসে-দাঁড়ানো অবস্থায় আমাকে ডাকতে থাকে। আর যখন তাকে বিপদ মুক্ত করে দেই তখন এমনভাবে চলে যায় যেন সে বিপদে পড়ে আমাকে ডাকেইনি।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত- ১০)

শায়খুল ইসলাম হজরত মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানী (রহ.)  এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, ‘মানুষ মূর্খতাবশত নিজেই আজাব চাইতে থাকে, কিন্তু যখন বিপদের সামান্য ঝাঁকুনি খায় তখন হতবিহ্বল হয়ে আমাকে ডাকা শুরু করে। মুসিবত যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ডাকতে থাকে। আর যখন বিপদ সরিয়ে নেওয়া হয় তখন সবকিছু ভুলে যায়। তখন আর আল্লাহর কথা মনে থাকে না। সেই গাফিলত, সেই উদাসিনতা, সেই পাপাচারে আবার মেতে ওঠে। ইতিপূর্বে যেগুলোর মাঝে সে আকণ্ঠ ডুবে ছিল।’

সুতরাং একজন মুমিনের জন্য উচিত হলো সে সবসময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। সুস্থ অবস্থায়ও আবার অসুস্থ অবস্থায়ও। এগুলোকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে। তখনই একজন মোমেন সফল হতে পারে। পরিশেষে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস দ্বারা শেষ করতে চাই। আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন ‘হে আমার উম্মাহ! পাঁচটি সম্পাদ হারানোর আগে যথাযথ মূল্যয়ন করো। ১. মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগাও। ২. বুড়ো হওয়ার আগে যৌবনকে কাজে লাগাও। ৩. দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার মূল্য দাও। ৪. অসুস্থতার আগে সুস্থতার মূল্য দাও। ৫. ব্যাস্ততার আগে অবসরকে কাজে লাগাও। (মুসতাদরেকে হাকিম, হাদিস নং-৭৮৪৬)

লেখিকা : মাহবুবা সিদ্দিকা

শিক্ষার্থী, মাহমুদিয়া মহিলা মাদরাসা

সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads