• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সাওম পালনকারীর মর্যাদা

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

সাওম পালনকারীর মর্যাদা

  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০২১

প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও মুসলিম উম্মাহর কাছে হাজির হয়েছে কল্যাণের মাস মাহে রমজান। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির তৃতীয় ভিত্তি হচ্ছে সাওমে রমজান। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর প্রতি মাহে রমজানের সাওম রাখা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য); যা লঙ্ঘন করা কবীরা গুনাহ। তাই একজন মুসলমানের জন্য নামাজ যেমন ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে রমজান মাসের সিয়াম রাখাও ফরজ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রমজানের সিয়ামকে ফরজ করেছি। যেমন ফরজ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি। এতে আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

রমজান মাসের প্রতিটি আমল যেমন আল্লাহর কাছে প্রিয় তেমনি আমলকারীও আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় হয়ে ওঠেন। তার জন্য রেখেছেন বিশেষ পুরস্কার ও মর্যাদা। হাদিসে যার প্রমাণ মেলে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট। কারণ, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৭৭৩)

আমলকারী যেন আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির মাধ্যমে আমল করতে পারে সেজন্য রহমতের (জান্নাত) দরজা খুলে দেন এবং শয়তানকে শিকলবদ্ধ করে রাখেন। হাদিসের ভাষায়, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান আসলে আসমানের (জান্নাতের) দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দি করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৭৭৮)

সব ইবাদতে লোক দেখানো ভাব থাকতে পারে। কিন্তু সাওম এমন এক ইবাদত যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে। তাই আল্লাহপাক নিজে দেবেন এর প্রতিদান এবং স্বর্গীয় আনন্দ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন যে, সাওম আমার জন্যই, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। যেহেতু সে আমারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার প্রবৃত্তি, তার আহার ও তার পান ত্যাগ করেছে। আর সাওম হলো ঢাল। সাওম পালনকারীর জন্য আছে দুটি আনন্দ। এক আনন্দ হলো যখন সে ইফতার করে, আরেক আনন্দ হলো যখন সে তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৯৮৪)

সাওম পালনকারীর মর্যাদাস্বরূপ আল্লাহপাক জান্নাতে একটি দরজা নির্মাণ করে রেখেছেন। যার নাম রাইয়্যান। হাদিসের ভাষায়, হজরত সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং -১৭৭৫)

সর্বোপরি সাওম পালনকারীর মর্যাদা প্রদান করা হবে আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত জান্নাত। হাদিসে এসেছে, হজরত হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা রাসুলে আরাবী (সা)-কে আমার বুকে লাগালাম। অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে এবং সেটাই তার শেষ কথা হয় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে সিয়াম রাখে এবং সেটাই তার শেষ আমল হয় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে কিছু সাদকাহ করে এবং সেটা তার শেষ কর্ম হয় তবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩৩২৪)

লেখক : এসএম আরিফুল কাদের

আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads