• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
 জাকাত ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক সমাধান

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

জাকাত ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক সমাধান

  • প্রকাশিত ১১ মে ২০২১

তানভীর সিরাজ

জাকাত কোরআনের একটি ঐতিহাসিক শব্দ। তার বিধান বাস্তবসম্মত ও পরোপকারী। জাকাত শব্দই যথেষ্ট ‘জাকাত ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক সমাধান’ শিরোনামটি বুঝতে। ইসলামী স্কলারগণ বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত ইসলামের এক অতুলনীয় বিধান।’ জাকাত শরীয়তের এমন এক অকাট্য বিধান, যে সম্পর্কে প্রমাণের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। এটি তার হকদারদের মৌলিক অধিকার। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো, উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া।

আল্লাহপাক জাকাতের টাকা দেওয়ার জন্য বলেছেন, কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৬০)

আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে দেখা যায়- জাকাত গ্রহীতাদের আট প্রকারে নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্তের কথা আগে বলেছেন। তারপর জাকাত বিতরণে বাকিদের কথা পরে বলেছেন। নিঃস্ব আর অভাবগ্রস্ত এমন একটি মানবিক অবস্থা কিংবা গুণ, যার সম্মুখীন আজ সমাজের অনেকেই। কিন্তু কারো কারো অবস্থা প্রকাশ পায়। আবার এমনো অনেক অভাবী পরিবার আছে যারা ঈশারা, ইঙ্গিতেও অন্যের কাছে হাতপাতাকে নিজের জন্য অসম্মান মনে করেন। হাদিসে রয়েছে, আত্মীয়স্বজন যদি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তাদেরকে প্রথমে জাকাতের টাকা দেওয়া উত্তম। ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়দেরকে জাকাত দেওয়া যাবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭১৬০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪২-৫৪৬)

আমাদের চারপাশে যারা বসবাস করেন  তারা সবচেয়ে তারাই আমাদের আপনজন। এমন করতে হবে প্রত্যেক সমাজপতিকে। সুতরাং তারা হয় কেউ আমাদের ভাই, বোন, চাচ,  ভাতিজা, অথবা প্রতিবেশী হবেন। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে আছে তারাই হবে নিজ সমাজের জাকাতের বেশি হকদার। আর এভাবে যদি খেয়াল করে করে জাকাত দেওয়া হয় তাহলে কোনো সমাজেই নিঃস্ব ও অভাবী পরিবার আর অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ প্রতিটি সমাজে যেমনি আছে বলতে না পারা লজ্জাশীল অসহায় মানুষ তেমনি প্রত্যেক সমাজে সমাজপতিও কম নেই, তবে শুধু পরিকল্পিত মানসিকতার অভাব।

আমরা যেভাবে জাকাতের অর্থ সমাজে দিতে পারি। তার ছোট্ট একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেক সমাজের সমাজপতিরা যদি সবাই পরামর্শ করে তাদের জাকাতের টাকা একত্র করে এবং হিসাব করে তাদের জাকাতের টাকা নিজেদের সমাজের নিঃস্ব ও অভাবী পরিবারে দান করে তাহলে আর কোনো সমাজে অসহায় থাকবে না এবং ধীরেসুস্থে সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মনে করেন একটা সমাজে সমাজপতি আছে মাত্র ৩ জন এবং নিঃস্ব পরিবার আছে ১০টি। তাদের প্রত্যেক সমাজপতির জাকাত এসেছে মোট ৩০ লাখ টাকা। তা হলে প্রত্যেক পরিবারে ৩ লক্ষ টাকা করে দিয়ে তাদেরকে কোনো না কোনো হালাল কাজের উদ্যোক্তা বানিয়ে দেওয়া। অথবা কোনো না কোনো ব্যবসার ব্যবস্থা করা। পরবর্তী বছর তারা যেনো জাকাত গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজেরাই সেই সমাজের নিঃস্বদের জাকাত দিতে পারে। তবেই তো সমাজ সুন্দর ও পরনির্ভরশীল হওয়া থেকে মুক্ত হবে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। মানবাধিকারের একটি দিকে লক্ষ করি। আমরা একটু খেয়াল করলে দেখবো কোরবানির গোশত যেমন পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যায় না, তেমনি জাকাতও পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে জাকাত আদায় হবে না।

শুধু মুসলমানকে জাকাত দেওয়া যাবে। অমুসলিমদের জাকাত দেওয়ার বিধান অবশ্য ইসলামের শুরুর যুগে থাকলেও এখন আর সেই হুকুম বহাল নেই। এটিকে ধর্মীয় অধিকার বলা যায়। জাকাত শুধু মুসলমানদেরকেই দেওয়া যাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দেওয়া হলে জাকাত আদায় হবে না। তবে নফল দান-খায়রাত অমুসলিমকেও করা যায়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস  ৭১৬৬, ৭১৬৭, ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫১৬-৫১৭)

জাকাতের টাকা জাকাতের হকদারদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। জাকাতের নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না। যেমন রাস্তা-ঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। সুতরাং চিন্তা করলে জাকাত শব্দেই মানবাধিকারের যুগোপযুগী ব্যাখ্যা খুঁজে পাবো। তাই আসুন! পরিকল্পিত জাকাত আদায় করি।

লেখক : চেয়ারম্যান, আস-সিরাজ ফাউন্ডেশন

শিক্ষাসচিব, আশরাফুল উলুম মাদরাসা, মাতুইয়াল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

ঃধহারৎংরৎধল.পঃম—মসরষ.পড়স

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads