• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নিরঙ্কুশ মৃত্যুর অপেক্ষা

  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২১

রাশেদ নাইব

 

 

 

শতাব্দীজুড়ে মরণ সত্য এই বাণী বহন করে যাচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। অনেকেই হেদায়েত নিয়েছেন আবার অনেকেই এই বিধান অস্বীকার করেছে। তবুও নিস্তার মেলেনি মৃত্যু থেকে। অর্থবিত্তে কতটা ঊর্ধ্বে যাওয়া যায় তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মগ্ন পুড়ো বিশ্ব। কত টাকা ইনকাম করা যায়, কিভাবে বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন হওয়া যায়। নিজেকে কীভাবে ফেমাস সেলিব্রিটি রূপে গড়ে তোলা যায়। সেই প্রতিযোগিতায় সদাই মগ্ন থাকি। একবারও ভাবার ফুরসত হয় না, মরণ অনিবার্য। মরতেই হবে। এটাই সত্য। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত দেখছি কত শত লাশ, করোনা নিয়ে যাচ্ছে কিংবা এক্সিডেন্ট অথবা সাধারণ ভাবেই মরে যাচ্ছে। তবু নিজের ভেতরে একটি বারের জন্যও কম্পন সৃষ্টি হয় না।

মৃত্যু নিয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতালা অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ। (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনি মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন। তিনি জানেন জরায়ুতে কী আছে। অথচ কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত। (সূরা লোকমান, আয়াত ৩৪)। আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘দূরাচারীরা কি মনে করে যে, তাদের জীবন ও মৃত্যু এবং বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জীবন ও মৃত্যু একইরকম হবে? কত ভ্রান্ত ধারণা ওদের।’ (সূরা জাসিয়া, আয়াত ২১)

নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করবো। আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেবো। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)। সত্যের পথে তোমরা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, তোমরা আল্লাহর কাছেই সমবেত হবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৮)। প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। মহাবিচার দিবসে তোমাদের সবাইকে কর্মফল পুরোপুরিই দেয়া হবে। সফল মানুষ হবে সে-ই, যাকে লেলিহান আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে। আর শুধু পার্থিব জীবন তো এক মরীচিকাপূর্ণ ভোগ-বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)। হে নবী! তোমার আগেও আমি কোনো মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। তোমার মৃত্যু হলে ওরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে? (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৪)

প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের ভালো ও খারাপ অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করি। আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)। মৃত্যু এলে বা ঘুমের সময় আত্মাকে আল্লাহ তুলে নেন। তারপর যার মৃত্যু অবধারিত তার আত্মা রেখে দেন। আর অন্যদের আত্মা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ফিরিয়ে দেন। সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগকারীদের জন্যে এর মধ্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে। (সুরা জুমার, আয়াত ৪২)। হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃত্যুরা উত্থিত হয়ে ছুটতে থাকবে, তখন তাদের সমবেত করা খুব সহজ একটি কাজ। (সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪৪)। আমি বিধান দিয়েছি যে, মৃত্যু সবসময় তোমাদের মাঝে অবস্থান করবে। আর তোমাদের অস্তিত্বের প্রকৃতি পরিবর্তন বা তোমাদের জানা নেই, এমন আকৃতিতে তোমাদের সৃষ্টি করা থেকে আমাকে বিরত রাখার শক্তি কারো নেই। (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০-৬১)। হে নবী ওদের বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাচ্ছ, তোমাদেরকে সে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে হাজির করা হবে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে। জীবদ্দশায় যা করেছ, তা তোমরা তখন পুরোপুরি জানতে ও উপলব্ধি করতে পারবে। (সুরা জুমা, আয়াত ৮)। সারাজীবন অন্যায় করে মৃত্যুশয্যায় এসে যারা বলে, আমি তওবা করলাম, তাদের তওবা কোন কাজে আসবে না। আর সত্য অস্বীকারকারী হিসেবেই যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্যেও তওবা নয়। তাদের জন্যে আমি নিদারুণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সুরা নিসা, আয়াত ১৮)। যারা মুক্তমন নিয়ে শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। মহাবিচার দিবসে আল্লাহ মৃতদের পুনর্জীবিত করবেন। তারপর তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। (সুরা আনজাম, আয়াত ৩৬)। তিনিই নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের উন্মেষ ঘটান আবার প্রাণকে করেন নিষ্প্রাণ। ধূসর জমিনকে তিনিই সজীব করে তোলেন। এমনিভাবে তোমাদেরও মৃত অবস্থা থেকে পুনরুত্থিত করা হবে। (সুরা রুম, আয়াত ১৯)

মৃত্যু নিয়ে হাদিস। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন সকালের জন্য অপেক্ষা  কোরো না, আর যখন তোমার সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা কোরো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও আর তোমার মৃত্যুর জন্য জীবিতাবস্থায় পাথেয় জোগাড় করে নাও। (বুখারি হাদিস নং ৬৪১৬)। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে- ইসলাম মৃত্যুকে ভয় না করে, মৃত্যুর স্মরণ ও পরবর্তী জীবনের পরিণতি চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সেসব মানুষের নিন্দা করেছে যারা মনে করে মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা জীবনের স্বাদ ধ্বংসকারী (মৃত্যু)-কে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো। (তিরমিজি হাদিস নং ২৩০৬)

পরিশেষে বলবো- মৃত্যু আসবেই আসবে। এটাই হচ্ছে মহা সত্য। মালাকুল মাউতকে কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না। অপেক্ষা শুধু মহান আল্লাহর হুকুমের। প্রতিনিয়ত প্রস্তুত থাকতে হবে, এটাই শেষ সময়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে এই প্রস্তুতি নিয়ে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads