• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
যে ছোঁয়া রয়ে যায় আজীবন

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

যে ছোঁয়া রয়ে যায় আজীবন

  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০২১

মোস্তাফিজুর রহমান

মেঘলা আকাশ, বসন্তের কৃষ্ণচূড়া দুলিয়ে বহমান শীতল বাতাস, ঠিক কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি বিলাসে একটি সবুজ পাখি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে তার ছোট্ট কোমল পাখা দুটি ঝাপটিয়ে প্রকৃতির পরম স্নেহের আবেশটুকু নিজের করে নিচ্ছে। প্রতিটি মুমিন মুসলিমের চাওয়াটাও যে এর ব্যতিক্রম নয়। সেও জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে আল্লাহতায়ালার মেহমান হিসেবে অনন্তকাল জান্নাতের অসীম আকাশে পাখা ঝাপটাবে। পরম করুণাময় আল্লাহ মুসলিমদের জান্নাতে যাওয়া সহজ করার জন্যেই প্রতিবছর রমজান নামক একটি মাসের নেয়ামত দান করেছেন।

‘রমজান’ একটি উত্তম, বরকতপূর্ণ ও গুনাহ মাফের মাস। আখিরাতে বিশ্বাসী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যেই রমজানের রয়েছে সর্বোত্তম শিক্ষা। কেননা রোজা রাখা হয় কেবল আল্লাহর জন্যেই। অন্য এবাদতে লৌকিকতার মনোভাব আসলেও রমজানের সিয়াম পালনে থাকে না কোনো লৌকিকতা। কেবল আল্লাহর ভয়েই মুমিন সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব পানাহার এবং নফসের প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকে। আর রমজানের প্রধান শিক্ষা হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর ভয়ে আখিরাতের পথে ধাবিত করা এবং ইমানকে পুনরায় উদ্দীপ্ত করা।

রমজান অতিদ্রুতই শেষ হয়ে যায়। এই করোনা মহামারীতে সবাই যেখানে গৃহবন্দি অবস্থায় সেখানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছে টেনে নেবার এক সুযোগ দিয়েছিলেন। সেটিও শেষ হয়ে গেলো। রমজান চলে গেলেও রেখে গিয়েছে রমজানের শিক্ষা। যে শিক্ষা আরো একটি বছর আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তার বিধান ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন আদর্শকে সামনে রেখে জীবনকে উপভোগ করার শক্তি জোগাবে। আর যদি ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে রমজানের শিক্ষা বাস্তবায়িত হয় তাহলে নৈরাশ্য, দুর্নীতি, দুর্বলের প্রতি নির্যাতনসহ সব অনিয়মের ইতি ঘটবে।

রমজান মাস গোপনে পাপাচার করা থেকে বিরত থাকা শিক্ষা দেয়। কেননা গোপনে করা গুনাহ মানুষের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। আর রোজার মহত্ব এবং এর পবিত্রতা রক্ষার্থেই রোজা অবস্থায় মিথ্যাবাদী মিথ্যা বলে না, ঘুষখোর ঘুষ খায় না, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজি করে না, অন্যায়কারী অন্যায় করতে লজ্জাবোধ করে। কেননা, এই সব পাপ রোজাকে নষ্ট করে দেয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে তাদের রোজা দ্বারা শুধু পিপাসায় লাভ হয়।’ (মেশকাত, হাদিস নং- ১৯১৭) রোজার অন্তর্নিহিত মূল উদ্দেশ্য হলো যাবতীয় অশ্লীলতা বর্জন করা, মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো এবং গিবত শেকায়েত করা হতে দূরে থেকে কৃচ্ছ্রতা বর্জন করা ও সর্বোপরি স্বীয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। সুতরাং কেউ যদি রোজা রেখে এসব গুণাবলি অর্জন করতে সচেষ্ট না হয়ে উপরন্তু সেসব মন্দের মধ্যে লিপ্ত থাকে, তাহলে সে রোজা রেখেও সত্যিকার অর্থে রোজাদার হতে পারলো না; বরং সারাদিন পিপাসায় কষ্ট করলো এবং রোজার ফলাফল হতে বঞ্চিত হলো। তাই সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ সারাদিন কষ্ট করে রোজা রেখে রমজানের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবার ভয়ে এই সব গর্হিত পাপাচার থেকে নিজেদের বিরত রাখার অনুশীলন অব্যাহত রাখে। তাই রমজান মাসকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনুশীলনের মাস বলা হয়। প্রকৃত সফল তো ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেলো আর নিজেকে পবিত্র করে নিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর সন্তোষ ও তার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস নং-২৬৩৭)

রমজান আসেই মূলত মুসলিমদের নেক আমলগুলোকে শাণিত করতে। তাই এই মাসে সবাই যার যার জায়গা থেকে নেক আমল করতে থাকে। ধনীরা গরিবদের অর্থ দিয়ে, খাবার দিয়ে, পোশাক দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। জাকাত ওয়াজিব হয়েছে এমন বিত্তশালীরা তাদের জাকাতের অংশ দিয়ে দুঃস্থ এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। এই মাসে পথশিশু, বস্তিবাসী, ফুটপাতে প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে খুব কষ্টে দিন পার করা মানুষগুলোর রোজা রাখা আরো সহজ করার জন্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে তাদের সাহরী ও ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় হা পুরো রমজানজুড়ে অব্যাহত থাকে। রমজান মাসে মানুষ তার ক্ষমতা, তার রাগ সংবরণ শিক্ষা পায়। তাই সমাজে সাম্য বিরাজ করে।

যে যুবক তার ভবিষ্যত নিয়ে ব্যস্ততার অজুহাতে আল্লাহর সামনে সিজদায় লুটে তার অসহায়ত্ব প্রকাশের অবকাশ পেতো না সেও এই মাসটাই মসজিদের প্রথম কাতারে ইমাম সাহেবের ঠিক পেছনে আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। যে যুবক তার যৌবনের শক্তি দিয়ে সব অপকর্মের মাঠগুলো দাপিয়ে বেড়াতো সেও মাথায় টুপি এবং মুখে দাড়ি নিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর পাবন্দি করে। যে যুবক নেশা করে শরীরের সব শক্তি নষ্ট করছে সে ও সারা দিন নেশা ছুঁয়েও দেখে না। যারা অনৈতিক কাজের মাধ্যমে সমাজকে নষ্ট করতে ব্যস্ত সেও একটা মাস ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে নৈতিকতার আদর্শের সৈনিক বনে যায়। তাই রমজান পরবর্তী প্রত্যাশা এই ছোঁয়া রয়ে যাক আজীবন। রমাজনের বাইরেও এই শিক্ষা অনুশীলন হলে সমাজে থাকবে না অন্যায়, থাকবে না ধনী-গরিব অসামঞ্জস্যতা। সুবিধাবঞ্চিতরা তাদের কষ্ট অনেকাংশেই ভুলে যাবে, নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি উচ্চশ্রেণির সহানুভূতি সৃষ্টি হবে। সমাজ চলবে সাম্যের মানদণ্ডে।

 

তাই প্রতিটি মুমিনের তামান্না হওয়া উচিত রমজানের প্রকৃত শিক্ষা ব্যক্তিজীবনে অনুশীলনের মাধ্যমে জান্নাতের জাফরান কোমল জমিনে আজীবন বাস। যেখানে বৃষ্টিস্নাত নরম জমিনের শীতলতায় আর জান্নাতি সুরের টানে জান্নাতি মেহমান আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিবেশী হয়ে অনন্তকাল পার করে দেবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়      

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads