• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়

  • প্রকাশিত ২০ মে ২০২১

মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

একটা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার মূল হাতিয়ার হলো ‘চুপ থাকা’। শয়তান তো বসে নেই। শয়তান মুমিনদের পেছন পেছন ঘুরপাক খায়। কীভাবে দুজন মুমিনের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি করতে পারে, কীভাবে স্বামী-স্ত্রীর সংসারের মাঝে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দিতে পারে, কীভাবে স্বামী-স্ত্রীর সংসারের অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে, কীভাবে দুই বন্ধুর মাঝে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে, কীভাবে দুই ভাইয়ের মাঝে মারামারি বাধিয়ে দিবে, এর ফিকিরে সবসময় নিমগ্ন। শত্রুদের থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার হলো ‘তলোয়ার’। তলোয়ার দিয়ে শত্রুদের সাথে মোকাবিলা করেই বিজয় ছিনিয়ে আনা যায়। তদ্রূপ শয়তান থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার হলো ‘চুপ থাকা’।

উদাহরণস্বরূপ : স্বামী-স্ত্রীর মাঝে চলছে তুমুল ঝগড়া! স্ত্রী স্বামীর ওপর প্রচণ্ড রেগে আগুন! এমতাবস্থায় যদি স্বামী চুপ থাকে, তাহলে এই ঝগড়া বেশি দূর গড়াবে না। কারণ, এক হাতে তো আর তালি বাজেনা! তদ্রূপ স্ত্রী যদি সারা দিনও ঝগড়া করে, স্বামী যদি চুপ থাকে অথবা স্বামী বকাবকি করলে  স্ত্রী যদি চুপ থাকে, তাহলে এই ঝগড়া বেশি দূর গড়াবে না। গার্হস্থ্য জীবনে বিচ্যুতির কোনো প্রশ্নই নেই।  তখন শয়তান পরাজিত বরণ করে নেয়। শয়তান চেয়েছিল দুজনের মাঝে ঝগড়া বাধিয়ে দিতে। একজন চুপ থাকার দরুন তা আর হলো না। কারণ, ঝগড়া করতে দুজন লাগে। একজনে কখনো ঝগড়া হয়না। যদি একা-একা কেউ বকাবকি করে, লোকেরা দেখলে তাকে পাগল বলবে।

জনৈকা এক মহিলা এক বুজুর্গের কাছে তার স্বামীর ব্যাপারে এই শেকায়ত করল যে, আমার স্বামী আমাকে প্রতিদিন প্রহার, বকাঝকা করে, আপনি কিছু একটা করুন! বুজুর্গ এক বোতল পানি দিয়ে বলল, এগুলো প্রতিদিন খাবেন। স্বামী যতই প্রহার করুক, বকাঝকা করুক; তুমি চুপ থাকবে। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। বুজুর্গের কথামতো মহিলাটি কাজ করতে লাগলো। কিছুদিন পর মহিলাটি আবার বুজুর্গের কাছে এসে বললো আপনার পানিপড়া কাজে দিয়েছে। কিছুদিন আমাকে বকাঝকা করলেও এখন আর করেনা। তার এই কথা শুনে বুজুর্গ মুচকি হেসে বলল, আমার পানিপড়া কাজ দেয়নি। দিয়েছে তোমার চুপ থাকাটা। কারণ, তোমার স্বামী তোমাকে বকাঝকা করলেও তুমি ছিলে চুপ। আগে তুমি তোমার স্বামীর মুখের ওপর কথা বলতে, তাই ঝগড়া দিন-দিন বেড়েই চলতো।

চুপ থাকার ব্যাপারে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যেই ব্যক্তি চুপ থাকে সে নাজাত পায়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-২৭৯) চুপ থাকতে পারাটা একটি মহৎ গুণ। চুপ থাকতে পারাটা অধিক কষ্ট ও সাধ্যেরও বটে। চুপ থাকা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না অর্থাৎ এই গুণটি সবার কাছে পাওয়া যায় না। বন্ধুদের মাঝে প্রথমে একটু-আধটু হাতের মশকারি হয়। তারপর এই মশকরা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। হাতাহাতি থেকে মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। অথচ তারা ছিল সেই ক্লাসের বা জামাতের ভালো বন্ধু। একজনকে রেখে আরেকজন নাস্তা করতে যায় না। পরবর্তীতে দেখা যায়, নাস্তা করা তো দূরের কথা, একজনের মুখ আরেকজন দেখতে পারে না।

যখন দুজন মিলে কোনো এক জায়গায় ঝগড়া করে অথবা দুই বন্ধু মিলে হাতের মশকারি করে। সেখানে তৃতীয় একজন অদৃশ্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকে। সেটা হলো শয়তান। সে বসে বসে দুজনকে প্ররোচনা দিতে থাকে। তাই তো হাদিসে কড়াভাবে নিষেধ করা হয়েছে যে, কোনো মুমিন যেন অন্য মুমিনের দিকে বন্দুক তাক না করে। হতে পারে হাত ফসকে গুলি বের হয়ে যেতে পারে। হতে পারে হাত ফসকে তীর বের হয়ে যেতে পারে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ধীরতা অবলম্বন করার তাওফিক দিন! আমীন!

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads