• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
গেমস একটি সামাজিক ব্যাধি

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

গেমস একটি সামাজিক ব্যাধি

  • প্রকাশিত ০২ জুন ২০২১

এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ

মোবাইল গেমস এটি একটি বিনোদন। একটি গেমিং অ্যাডিকশন। আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম উপহার। বেকার মানুষের প্রিয়বন্ধু। তরুণ প্রজন্মের সর্বক্ষণের সঙ্গী। আরো রয়েছে কত কি! তবে এত কিছুর পরেও এটিকেই আমরা বলছি ‘ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি’। আর এটিই বাস্তব সময়ের সত্য কথা।

বর্তমান সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তি সবকিছু এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়। করে দিয়েছে সব কাজের সুযোগ-সুবিধা। মানুষের বিকল্প এখন আধুনিক প্রযুক্তি। স্বল্পসময়ে বৃহৎ কাজ আঞ্জাম দেয় তথ্যপ্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একদিকে যেমন আমাদের সময়কে বাঁচাতে পারি তেমনি অন্যভাবে আমাদের সময়কে নষ্টও করতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় সবার হাতে হাতে নানা ধরনের ডিভাইস রয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক ভিডিও গেমস অর্থাৎ গেমিং অ্যাডিকশন। বর্তমান সময়ে এমন তরুণ খুব দুর্লভ, যার কাছে স্মার্টফোন আছে কিন্তু গেইমস খেলে না। এটি আমাদের যেমন সাময়িক আনন্দ দিচ্ছে, ঠিক তেমনি কেড়ে নিচ্ছেও মহামূল্যবান অনেক কিছু। মারা যাচ্ছে শিশু-কিশোরের সুপ্ত প্রতিভা। চুষে খাচ্ছে মহামূল্যবান সময়। নষ্ট করছে কোটি মানুষের অমূল্য জীবন। শেষ করছে মাতৃভূমির সুনাম ও জশ-খ্যাতি।

স্মার্টফোন হাতের মুঠোতে থাকায় দেশীয় খেলাধুলা দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের ঐতিহ্য খেলাধুলা বা শারীরিক ব্যায়াম। অতীতের সোনামাখা বিনোদন আর নেই। চারিদিকে শোনা যায় শারীরিক বিনোদনের হাহাকার। দেখা যায় মানবদেহে ব্যায়ামের শূন্যতা। মনে নেই আনন্দ ফুর্তির মুক্ত বাতাস। আর না দেখা যায় স্কুল-মাদরাসা ছুটি হলে লাটিম নিয়ে মেতে ওঠা। মার্বেল নিয়ে খেলাধুলা। ঘুড়ি নিয়ে রৌদ্রভরা দুপুরে মাঠে দৌড়ানো।  শিশু-কিশোরেরা আজ মেতে উঠেছে মোবাইল গেমসে। জেগে উঠেছে নেশা আসক্তিতে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মাঠে গিয়ে খেলার চেয়ে মোবাইল ফোনেই বিভিন্ন গেম খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করছে। তাই দৈনন্দিন মানসিক বিনোদন চাওয়া মোবাইল গেমস দিয়েই পূর্ণ করছে তারা। প্রয়োজন পড়ে না চার দেয়ালের বাইরে যেতে। সারাক্ষণ মোবাইল গেমস পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো হিংস্র সব ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত। ফলে তারা ঝুঁকে পড়ছে অশ্লীলতার দিকে। অবলোকিত হচ্ছে বিভিন্ন অপকর্মে। তৈরি হচ্ছে খোদাদ্রোহী সন্ত্রাসরূপে। জড়িয়ে পড়ছে ধর্ষণ ও মদ্যপানসহ নানান অসঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক ব্যাধিতে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানবতার বদান্যতা থেকে। সরে যাচ্ছে ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে। এভাবেই দিনের পর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের এক ঝাঁক কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী।

ভিডিও গেমসের প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহ নতুন কিছু নয়। তবে আগের তুলনায় এখন শতগুণ বেশি। এই আসক্তিকে সমপ্রতি মানসিক রোগের তালিকায় অর্থাৎ সামাজিক ব্যাধিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই স্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শিশুদের এসব ভার্চুয়াল গেম থেকে দূরে রেখে আবার মাঠের খেলায় ফেরাতে হবে। না হলে তরুণ প্রজন্ম মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আল্লাহরাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ নিয়ামতসমূহের অন্যতম হলো ‘সময়’। যেটা একবার ফুরিয়ে গেলে আর পাওয়া যায় না। একবার চলে গেলে আর ফিরানো যায় না। সময়ের আবর্তনে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর এভাবেই হারিয়ে যায়। সময়ের ইতিবাচক ব্যবহারই জীবনের সফলতা। সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার জীবনের ব্যর্থতা। সময়ের যথাযথ ব্যবহার না করা বা অপব্যবহার করার জন্য জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহর দরবারে। মহাগ্রন্থ কোরআন কারীমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর, আয়াত : ১-৩) একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে কিন্তু বৃহৎ সময়কে আমলহীন অতিবাহিত করেছে।’ (তিরমিযি : ২৩২৯)

পরকালে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। তাই আমরা অযথা মোবাইল গেমস প্রতি আমাদের মূল্যবান সময়কে নষ্ট না করি। জীবনকে গেমস আসক্তিতে  তছনছ করে না ফেলি। জীবন একটিই। আর এই এক জীবনে ইবাদত করেই জান্নাত হাসিল করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে হারাম আসক্তি থেকে হেফাজত করে সঠিক দীনি পথে চলার তৌফিক দান করুক। সর্বোপরি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি, যিনি এই সামাজিক ব্যাধিকে দূরীভূত করার আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহ এই আহ্বানকে বাস্তবায়ন করুন। আমিন।

 

লেখক : কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads