• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

গেমস আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

  • প্রকাশিত ০৮ জুন ২০২১

মো. হুসাইন আহমদ

 

বর্তমান সময়ে মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস কারো কারো কাছে এটি নেশার মতো হয়ে যাচ্ছে যে, জীবনের বাকি সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ছে। বিশ্লেষকরা এখন বলছেন, মাদকাসক্তির মতোই ক্ষতিকর ‘গেমস আসক্তি’। যার বাস্তবতা আমরা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। এই আসক্তি থেকে বের হতে হলে অবশ্যই তাদেরকে চিকিৎসা করাতে হবে। আর এদিকে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার ও মোবাইল গেমস একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, দিন দিন বড় হচ্ছে এর বাজারও। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, গেমারদের বেশির ভাগই শিশু ও টিনএজার। এছাড়া বর্তমান যুব সমাজ স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফ্রী ফায়ার, পাবজিসহ আরো কিছু গেমে খুবই নেশা হয়ে উঠছে। যেন এই গেমিং তাদের প্রতিদিনের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। কমবয়সী যুবকদের গেমের প্রতি আগ্রহ খুব বেশি। এটা মাদকাসক্তির মতোই ক্ষতিকর। এই আসক্তি থেকে বাঁচাতে হবে, মুক্ত করতে হবে।

সহজলভ্যতা দূর করুন : শিশু যদি ছোট হয় (৫ বছর পর্যন্ত) তবে কোনো পরিস্থিতিতেই শিশুর হাতে মুঠোফোন বা ভিডিও গেম তুলে দেবেন না। নিজের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করুন, বাড়ির খুব দরকারি জিনিসের মতো মুঠোফোনও একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস, শিশুর খেলার সামগ্রী নয়। মা-বাবাও যদি মুঠোফোনকে সেভাবে চিহ্নিত করেন, তাহলে শিশুরাও অবশ্যই বুঝবে ব্যাপারটা। শিশু একটু বড় হয়ে গেলে তাদের টিভি বা মুঠোফোনে আসক্তির খারাপ দিকগুলো বোঝানো উচিত।

শিশুদের একাকিত্ব দূর করুন : আজকাল বেশির ভাগ পরিবারই অতিব্যস্ত। তাই বন্ধু ও পরিবার-পরিজনহীন বাড়িতে টিভিকেই তারা পরম বন্ধু করে নেয়। অনেক সময় মাুবাবা দুজনই চাকরিরত হলে শিশুর দেখাশুনা করার লোক তাকে টিভির সামনে বসিয়ে নিজের কাজ সারেন। ফলে শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ে টিভিতে।

নতুন নতুন জিনিস শেখান : শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিন্তা-ভাবনা করুন। বিকেলবেলাটা শিশুকে কিছু বিনোদনের মধ্যে থাকতে শেখান। এ সময় ওরা সমবয়সীদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এতে ওদের একাকিত্ব ঘুচবে, মনটাও অনেক সুন্দর ও সতেজ থাকবে।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ুন : শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। যদি শিশুদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বাড়ে, তাহলে টিভি, মুঠোফোন বা ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে অনেক সহজেই শিশুদের দূরে রাখা সম্ভব হবে। মাঝেমধ্যে শিশুদের নিয়ে ঘোরাঘুরির দিন নির্ধারণ করুন। ওদের খেলার সঙ্গে নিজেরাও একটু মেতে উঠুন। দেখবেন ওরা অনেক বেশি উপভোগ করছে ওদের শৈশব।

নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে রাখুন : অনেক সময় বিভিন্ন গেমস ও কার্টুন চরিত্র শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব মাধ্যমে দেখানো বিভিন্ন মারপিট বা সহিংস দৃশ্য শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তারা অতিরিক্ত সচেতন হয়ে ওঠে। তাই লক্ষ রাখুন আপনার শিশু কী দেখছে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে কাছে নিয়ে একসঙ্গে বসে ওকে সঠিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন। অন্যথায় অচিরেই শিশুর মনের মধ্যে অকারণ জটিলতা, ভয় বা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। নানা রকম মানসিক রোগেও আক্রান্ত হতে পারে তারা। শুধু তা-ই নয়, যেকোনো কাজে মনোসংযোগ করতেও তাদের অসুবিধা হয়।

ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন : শিশুকে খাওয়ানোর সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের বদ অভ্যাস রাখবেন না। আজকালকার দিনে এটা শুনে আপাত অসম্ভব মনে হলেও কয়েক দিন অভ্যাস করলেই এটা সহজ হয়ে উঠবে। বরং গল্প বলুন, বই পড়ুন বা ধর্মগ্রন্থ পড়ে শোনান। এতে শিশুরা অনেক ধরনের প্রশ্ন করতে শিখবে, নতুন বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান বাড়বে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মন বিক্ষিপ্তও থাকবে না। সবকিছুই সম্ভব হবে যদি মা-বাবা সঠিকভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এর জন্য নিজেদের শিশুর সামনে উত্তম আদর্শ হিসেবে তুলে ধরুন। মনে রাখবেন কম্পিউটার ও মুঠোফোনে গেম খেলা বা টিভি দেখার অভ্যাস মা-বাবার মধ্যে যত নিয়ন্ত্রিত হবে, শিশুরাও ততই উপকৃত হবে। তাই শিশুদের এ ক্ষতিকর আসক্তি হতে ফেরান। আর যুব সমাজকে এর বিকল্প ভালো কিছুর মধ্যে নিয়োজিত রাখার ব্যবস্থা করুন। যাতে গেম খেলা থেকে নিজে নিজেই বিরত থাকে ও নিজ থেকেই গেমের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করেন। আমিন।          

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

শিক্ষার্থী, ইফতা, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads