• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন ফরজ

  • প্রকাশিত ১১ জুন ২০২১

শাহ বিলিয়া জুলফিকার

 

 

আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাত। জন্মগতভাবে অন্য প্রাণিদের মতো-ই প্রাণি। তবে অন্যান্য প্রাণি ও আমাদের মাঝে পার্থক্য হলো, ‘জ্ঞান থাকা’ বা ‘না থাকা’। আমাদের খেয়ে-ধেয়ে শুধু জীবনযাপন করলেই হয়না, অর্জন করতে হয় জ্ঞান, হতে হয় জ্ঞানী। আর আমাদের আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয় হলো, আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের ধর্ম ইসলামে প্রতিটি মানুষকে বলা হয়েছে জ্ঞান অর্জন করার কথা। বলা হয়েছে এর অশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত।

মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জন করতে ও সঠিক পথ বুঝার জন্য আল্লাহতায়ালা মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করেন আমাদের জীবন বিধান ‘আল  কোরআন ’। আল্লাহতায়ালা ‘সুরা আলাক’-এর প্রথম ৫ আয়াত নাজিল করার মধ্য দিয়ে, ওহি বা কোরআন নাজিলের সূচনা করেন। উক্ত ৫ আয়াতের মধ্যে প্রথম আয়াতে-ই আল্লাহতায়ালা বলেন ‘ইকরা বিশমি রব্বিকাল লাজি আলা’ অর্থাৎ ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’। আল্লাহতায়ালা ইচ্ছে করলে, প্রথম-ই আমাদেরকে নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত কিংবা অন্যান্য ইবাদতের নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু দেননি। দিয়েছেন জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ, বলেছেন ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়ো’ তথা জ্ঞান অর্জন করো।

জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রশংসায় আল্লাহরাব্বুল আলামীন  ঘোষণা করেন, ‘আর আমি ওই দৃষ্টান্তগুলো মানুষের উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশে বর্ণনা করে থাকি। বস্তুত ওইসব দৃষ্টান্ত কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বোঝে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত-৪৩) মহান আল্লাহ আরো এরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞানী নয় তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত-৯)  কোরআনপাকের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে ‘হে নবী বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে?’ (সুরা রাদ, আয়াত-১৬) জ্ঞানী লোকদের আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতেও  উচ্চ মর্যাদা দান করেন,আখেরাতেও করবেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১) অন্যত্র আল্লাহরাব্বুল আলামীন বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সুরা আল ফাতির, আয়াত- ২৮) আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘(হে নবী) আপনি বলুন! যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত-৯)

জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ) বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অনুসন্ধানে বের হয়েছে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে সে পর্যন্ত না ফিরে আসবে (তিরমিযি) অর্থাৎ, জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত থাকা আল্লাহর রাস্তায় থাকারই নামান্তর। জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর নবী আরো বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা (জ্ঞানহীন) ইবাদতকারীর ওপর এরূপ যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সবার ওপর। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি মানুষকে ভালো কথা শিক্ষা দিয়ে থাকে তার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমানবাসী, জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপীলিকা পর্যন্ত দোয়া করে। (তিরমিযি শরিফ) বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানলাভের উদ্দেশে কোনো পথ অবলম্বন করলো আল্লাহতায়ালা এর দ্বারা তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন।

‘যখনই কোনো একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো একটি ঘরে (মসজিদ, মাদরাসায়) একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং তা পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখনি আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের ওপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে শুরু করে, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে ফেলে এবং আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের কাছে এসব বান্দার আলোচনা (প্রশংসা) করেন। যার কর্ম তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।’ (মুসলিম শরিফ) হজরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে  দীনের (ইসলামের) সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন (বুখারি, মুসলিম) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads