• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কোরআন বুঝার গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ১৫ জুন ২০২১

ইমরান নাজির

 

 

আল্লাহতায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম নবী হলেন মানবকুলের প্রথম অধিবাসী আমাদের আদিপিতা হজরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ নবী হলেন মানবতার মুক্তির দূত সাইয়িদুল আম্বিয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মানবতার বন্ধু মুমিনের প্রাণাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মানবজাতিকে সঠিকপথে পরিচালিত করার জন্য হেদায়েতের বাণী হিসেবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয়নবী রহমতে দুআলম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কোরআন। যেটি পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের শবে কদরের রজনীতে নাজিল হয়। যা মানবজাতির প্রয়োজনার্থে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাকুলের সর্দার হজরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করেন।

 

প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কোরআনের বিধান অনুযায়ীই তাঁর জীবনের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন। আর তাঁর সহচর সাহাবিদের ওপরও কোরআন শিক্ষার গুরু দায়িত্ব আরোপ করে তাঁদেরকে তা জানা ও বুঝার সুযোগ করে দেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম কোরআন শিক্ষা করে এবং তা জেনে-বুঝে হয়ে উঠেন একেকজন অসাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব। তারা কোরআন জানা-বুঝার কারণে সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারামের দিশা পান। তদনুযায়ী আমল করে তাঁদের ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গঠন করেন।

 

আজ বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আমরা মুসলমানরা শুধু কোরআন শিখার মধ্যেই ক্ষান্ত থাকি। কোরআন শিখার পর কোরআনকে জানা-বুঝাও যে আমাদের ওপর অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব তা আমরা অনেকেই জানিনা। জানলেও এ ব্যাপারে কোনো গ্রাহ্য করি না।  কোরআনের তেলাওয়াত শিক্ষা হয়ে গেলেই মনে করি  কোরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শেষ। কিন্তু আসলে তা নয়। কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করা যেমন আমাদের ওপর ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে কোরআন জানা-বুঝাও গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা একেবারেই উদাসীন। আল্লাহ প্রদত্ত এই ঐশীগ্রন্থকে আমরা মোটেও বুঝার চেষ্টা করি না।

অথচ দুনিয়ার মানবরচিত সাধারণ শিক্ষা যেমন সাহিত্যের ছোট একটি গল্প বা কবিতা পড়তে গেলে কবির জীবনী বা লেখক পরিচিতি, পাঠ পরিচিতি, কবিতার প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যা ও সারমর্ম জানার জন্য আমরা কত ব্যাকুল হয়ে উঠি! যা ইহলৌকিক শিক্ষা জীবনে আমাদের কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপকারে আসে তাও যদি পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে লিখতে পারি। না হলে নয়।

 

কিন্তু যে কোরআন মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অমূল্য এক মহা ঐশীগ্রন্থ, ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের মুক্তির পথ, সত্য-মিথ্যার পথ প্রদর্শনকারী, হালাল-হারাম চিহ্নিতকারী; সেই মহা ঐশীগ্রন্থের কয়টি সুরা বা আয়াতের অর্থ, ভাবার্থ, ব্যাখ্যা, প্রেক্ষাপট ও শানে নুজুল আমাদের জানা আছে? মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ নাজিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কোরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোনো হিদায়াতকারী নেই।’ (সূরা যুমার, আয়াত- ২৩)

 

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, এর মাধ্যমে তিনি তাদের দেখান শান্তি ও নিরাপত্তার পথ। আর নিজ ইচ্ছায় তাদের বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোতে এবং প্রদর্শন করেন সত্য সরল পথ।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-১৫, ১৬) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআনের আহ্বান ও আলোচ্য বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করো, অবশ্যই তোমরা সাফল্য লাভ করবে।’ (বায়হাকি)

অতএব, আমাদেরকে কোরআন শিখার ন্যায় তা বুঝতেও হবে এবং তদনুযায়ী আমল করে আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন গঠন করতে হবে। তবেই আমরা ইহকালীন জীবনে শান্তি এবং পরকালীন জীবনে মুক্তি পেতে পারি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, আলিম ২য় বর্ষ, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads