• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

ধর্ম

লকডাউন থেকে শিক্ষা

  • প্রকাশিত ২১ জুন ২০২১

হাসান মুরাদ

 

‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর কবিতার চরণ দিয়ে লেখাটি শুরু করছি। এই পৃথিবীতে আমরা সবাই ছাত্র। প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখছি। সামপ্রতিক কালে বহুল প্রচারিত ও উচ্চারিত একটি শব্দ ‘লকডাউন’। লকডাউনেও আছে নানা শিক্ষার দিক। শিক্ষার দিকটা একটু পর্যালোচনা করা এ প্রবন্ধের মুখ্য উদ্দেশ্য। এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। উত্তাল সে তরঙ্গকে প্রশমিত করতেই আবার লকডাউন। লকডাউনের কথা শুনলেই আমাদের মানসপটে কিছু চিত্র  ভেসে ওঠে। যেমন, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া। সমাগম, ভিড় এড়িয়ে চলা। বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মাস্ক ব্যবহার করা। যত্রতত্র আড্ডা না দেওয়া ইত্যাদি। ঈদের আগে করোনার সে ঢেউ ছিল আরো গতিময়। জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল কঠোর পদক্ষেপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল চৌকস, সতর্ক। আমলা-দায়িত্বশীলগণ যথেষ্ট পেশাদারিত্বের পরিচয় দিলেন। করোনার ছোবল থেকে বাঁচাতে সকলকে বলা হলো ঘরে থাকতে। ঘরে থাকাই নিরাপদ। প্রচার প্রচারনার কমতি ছিল না। বাস, ট্রেন, বিমান, লঞ্চ আগেই  বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু না! জনগণ তা শুনল না। রুদ্ধতা যখন নিরাপত্তা, তখনো মানুষ স্বাধীন চলাফেরাতে ব্যাস্ত। এজন্য কতজনকে জরিমানা করা হলো। করা হলো অপমান-অপদস্থ। তবুও কি সে যাত্রা থেমেছিল? অতিথি পাখিদের মতো মানুষ দলবেঁধে যাত্রা শুরু করল। ৬৫ লাখ মানুষ শুধু ঢাকা ছাড়ল। বেশামাল অবস্থা দেখে বিশেষজ্ঞরা হলেন নির্বাক, হতবাক! বললেন, এবারের ঈদযাত্রা হবে শবযাত্রা। যদিও তা হয়নি! আলহামদুল্লািহ। আশা করি হবেও না, ইনশাআল্লাহ!

 

লকডাউনের এ জ্বালাতন কেন? সেটাও আমাদের জানা। করোনা থেকে নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। করোনাভাইরাস একটি নব্য সৃষ্ট রোগ। মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য বিজ্ঞজনেরা  ধারণাবশত এসব ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে প্রাণপন চেষ্টা করছে। তাই কিছু সচেতন মানুষ এগুলো আমলে নিচ্ছে। আর অধিকাংশই উদাস, উদাসীন। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।  হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার অবস্থা সে ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন প্রজ্জলিত করল, যখন তার চারপাশ আলোকিত হলো, তখন পতঙ্গ ও সেসব প্রাণী যা আগুনে পড়ে থাকে, তাতে পড়তে লাগল। সে ব্যক্তি সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু তারা তাকে হারিয়ে দিয়ে আগুনে ঢুকে পড়তে লাগল। এরপর তিনি বলেন, এটাই হলো তোমাদের আর আমার অবস্থা। আমি জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধগুলো ধরে রাখি, আর বলি আগুন থেকে দূরে থাক। আর তোমরা আমাকে পরাজিত করে সে আগুনের মাঝ ঢুকে পড়ছো।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং- ৫৭৫৮)

 

হাদিসটি গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে প্রচলিত লকডাউন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করেছেন। জাহান্নাম থেকে উম্মতকে বাঁচাতে জীবন-জীবিকার ওপর কিছু আদেশ-নিষেধ আরোপ করেছেন। স্বাধীন জীবনের ওপর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন, মিথ্যা, জুলুম, অবিচার-অনাচার, অশ্লীলতা, মাদক দুর্নীতি পরিহার করা ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে সাহাবা, পীর, মাশায়েখ উলামা সবাই উম্মতকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখতে নীতিগত অনেক মাধ্যম গ্রহণ করেছেন। কোরআন-সুন্নাহর জ্যোতির্ময় বাণী দ্বারা উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আফসোস! উম্মাহর অধিকাংশ সদস্য সে মত ও পথ পরিহার করেছে। দিকভ্রান্ত হয়ে ধ্বংসের পথ ধরেছে। জান্নাতের মসৃন পথ রেখে জাহান্নামের কণ্টকাকীর্ণ পথের পথিক হচ্ছে।

আল্লাহতায়ালা নারীদেরকে বলেছেন তোমরা ঘরের পরিবেশে থাক। চেহারাতে খিমার দাও। পুরুষদেরও বলেছেন দৃষ্টি অবনত রাখ। আশ্চর্য! মানুষ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে চেহারা ঢাকতে পারে। কিন্তু জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে চেহারা ঢাকতে পারে না। মুমিন-মুমিনাদের বলা হল অনর্থক কথা থেকে দূরে থাক। আড্ডার আসর ছেড়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। কিন্তু উম্মত সে বিধিনিষেধ  ছেড়ে  জাহান্নামের আগুনকেই বেছে নিচ্ছে। লকডাউন অমান্য করে মানুষ মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি করছে। কিন্তু গোনাহের  লকডাউন ভঙ্গের কারণে জাহান্নাম অবধারিত হচ্ছে, সে ভাবনা কি আমাদের ভাবাচ্ছে?  করোনার লকডাউন হয়ত এক সময় উঠে যাবে। কিন্তু জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য মুমিনদের জীবনে যে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে তা উঠবে না। তাই মুমিন হিসাবে আমাদের হতে হবে সতর্ক। যে সকল অপরাধের কারণ শাস্তি সুনিশ্চিত, এমন অপরাধ থেকে দূরে থাকতে হবে। অন্যদেরকেও সে অপরাধপ্রবন জীবন থেকে ফেরাতে উদ্যোগী হতে হবে।

স্বভাবতই মানুষ ভুলে যায়। উদাসীন হয়। তবে জাতীর রাহবার যারা, তারা মানবতার কাছে দায়বদ্ধ। মানবতার সে জায়গা থেকে তারা নিরলস কাজ করে যায়। চলমান এ মহামারী থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখতে যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আর করোনা সংকটে যারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়েছেন তারা হোক সম্মানীত। তাদের প্রতি বহমান হোক দয়াময়ের করুণা। অনুরূপ যারা দীনের তরে নিবেদিতপ্রাণ। যারা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য জীবন-যৌবন, মেধা শ্রম  কোরবান করছেন, তাদের প্রতি বর্ষিত হোক রহমতের শীতল ছায়া। এমন মানুষগুলোও পাক সমাজের স্বীকৃত মর্যাদা ও রবের নিরবচ্ছিন পুরুস্কার।

লেখক : শিক্ষক, দারুস সুন্নাহ মাদরাসা, ভেড়ামারা কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads