• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই

  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০২১

মুফতি এহসান বিন মুজাহির

 

ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক সর্ম্পক ভ্রাতৃত্বের। এ সর্ম্পকের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামের অপরিহার্য বিধান উপেক্ষা করে মুসলিম জাতি আজ শতধাবিভক্ত। অথচ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশ্বের সব তাগুতি শক্তিগুলো আজ এক প্লাটফর্মে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ আজ পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নিন্দাবাদের ঘৃণ্য স্লোগান ও কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে লিপ্ত। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতালিপ্সা পরিহার করে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। সংঘবদ্ধতার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনসহ, ইসলাম ও রাষ্ট্রের অসমান্য অবদান রাখা সম্ভব। ভেদাভেদ, অনৈক্য, ফিরকা ইত্যাদি ভুলে গিয়ে ইস্পাত কঠিন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়াই  কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা। মহান অল্লাহরাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত-১০)

তাওহিদের পর মুমিনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো সংঘবদ্ধতা। ইসলামে সংঘবদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধতা সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘তোমরা সেইসব লোকদের মতো হবে না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান-১০৫) আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, সালাত কায়েম করো এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হবে না, যারা তাদের দীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত -৩১,৩২) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা ইমরান, আয়াত-১০৩) আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে বেশি ভালোবাসি যারা আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, ঠিক যেন শীসাঢালা এক সূদৃঢ় প্রাচীর।’ (সুরা সফ, আয়াত-৬১)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয় আর তার মাথা আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আহত হয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং-২৫৮৬) হজরত হারিছ আল আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে: ১. সংঘবদ্ধ। ২. আমীরের নির্দেশ শ্রবণ। ৩. আমীরের নির্দেশ পালন। ৪. হিজরত। ৫. অল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামাজ কায়েম এবং রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-২৭৯০)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একট অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৬০১১) রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করো, সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করো না, কারণ বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের কুপ্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-১৯৩৬) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবিষ্ট করেন।’ (বুখারি, হাদিস নং- ২৭২৫)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিনজন লোক কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকলেও একজনকে আমীর না বানিয়ে থাকা জায়েজ নয়।’ (আহমদ আল মুসনাদ, হাদিস নং-৬৩৬০) হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। (মুসলিম, হাদিস নং ৫২৯২) হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-১১২৬)

 

 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

মুহতামিম, ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম মাদরাসা, শ্রীমঙ্গল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads