• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

জুমাবারের আমল ও ফজিলত

  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০২১

কাজী আব্দুল্লাহ

 

 

শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন। এই দিনকে ‘ইয়াউমুল জুমা’ বলা হয়। আল্লাহতায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগৎকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমার দিন। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে। আল্লাহতায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এদিন নির্ধারিত করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামে জুমার গুরুত্ব অপরসীম। আল্লাহপাক কোরআনে করিমে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্যে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো।’ ( সুরা জুমা, আয়াত নং-৯)।

তাই জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা সকল মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে তা-ই কবুল হয়। জুমার দিনে বিশেষ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা এবং রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে যেসব গুনাহ হয়ে থাকে তা পরবর্তী নামাজ, জুমা এবং রমজান পালনে সেসব মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়। যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, তিরিমজি)। উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের নামাজ পড়ার পর পরদিন ফজরের নামাজ আদায় করে তবে এ সময়ের মধ্যে করা সব (কবিরা গুনাহ ব্যতীত) গুনাহ আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। অনুরূপভারে এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজানের  রোজা আদায়ের পর থেকে পরবর্তী রমজানের রোজা আদায় করে তবে ওই ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত পূর্ণ এক বছরের সব (কবিরা গোনাহ ব্যতীত) গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে তিনটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ-

১. জুমার দিনে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। পবিত্র কোরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮ নং সুরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সুরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে। যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্বকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে। এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব (কবিরা গুনাহ ব্যতীত) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

২. জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরুদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০ টি রহমত নাজিল হয়। আর যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার দরুদ পড়বে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।

৩. জুমার দিন দোয়া কবুলের কিছু সময় বা মুহূর্ত রয়েছে। সে সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করা। বিশেষ করে জুমার দিন ও জুমার নামাজ আদায় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এ দিনের প্রতিটি আমলই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে অলসতাবশত তিনটি জুমা ছেড়ে দেবে, আল্লাহতায়ালা তার হূদয়ে মোহর মেরে দেবেন। (মুসলিম, তিরমিজি)। পরিশেষে আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জুমার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার দিনের আমল ও করণীয়গুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার দিনের মর্যাদা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সবাইকে মাফ করে দিন। আমিন।

 

লেখক : তরুণ সাংবাদিক ও অনুবাদক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads