• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

করোনা এবং আমাদের করণীয়

  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০২১

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

সারা বিশ্ব করোনার মতো কঠিন এক ভয়াল মহামারিতে আতঙ্ক। মৃত্যুর ভয়ে মানুষের অন্তর রীতিমত প্রকম্পিত হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলছে লাশের যেনো এক  বাহারি আয়োজন। চারিদিকে স্বজনহারাদের আর্তনাদ। এটা এমন একটি দুর্লভ ইঙ্গিত যা ইতিপূর্বে পৃথিবী কখনো অবলোকন করেনি। পৃথিবী এমন দীর্ঘস্থায়ী মহামারি কখনো দেখেনি। যা আমাদের চোখের সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। সমগ্র পৃথিবীতে একই সাথে এত মানুষের আর্তনাদের চিৎকার। চারিদিকে শুধু করোনার ভয়। কার আগে কে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তা জানা নেই কারো। এ যাবত অনেক তরুণ বয়সের মানুষও মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা কি জানতো যে করোনার এই ভয়াল থাবায় তারা আক্রান্ত হয়ে ইহকাল ত্যাগ করবে। এপ্রশ্ন কখনোই তাদের মানসপটে উদয় হয়নি।

আমরা সবাই জানি, দিনদিন করোনা তার  রূপ বদলাচ্ছে। বাস্তবিক পক্ষে এখনো গবেষকগণ করোনা থেকে পরিত্রাণ লাভ করার মেডিসিন বের করতে সক্ষম হয়নি। এর দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায় যে, আমাদের প্রভু আল্লাহতায়ালা  আমাদের ওপর রাগান্বিত হয়ে আছেন। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য উচিত হচ্ছে- আমরা যে যেই প্রান্তেই থাকি, বেশি থেকে বেশি আল্লাহতায়ালার নিকট খুবই  বিনয়ের সাথে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই নিবেদন জানানো; হে দয়ার সাগর। হে অসীম দয়ালু। হে ক্ষমার অধিকারী। আপনি আমাদের ওপর থেকে আরোপিত মহামারি উঠিয়ে নেন। আমরা এ ভয়াবহ পরীক্ষা দিতে পারবো না। কারণ আমাদের ঈমান অতি দুর্বল। আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো, যদি আপনি আমাদেরকে পরীক্ষা করেন। এইভাবে বিনয়ীর সাথে প্রভুর নিকট দুর্বলতা পেশ করা এবং বেশি বেশি তওবা করা।

সুন্দর পৃথিবী পেতে হলে হাদিসের ভাষ্যমতে সমাজ থেকে সকল প্রকার বেহায়াপনা, অশ্লীলতা মূলোৎপাটন করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় সর্ব প্রকার বালা-মসিবত খুব শিগগিরই এভূপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নেবে। আমরা নিজেদের ব্যাপারে অনেক গাফেল হয়ে গেছি। নফসের আনুগত্যের মাঝে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কথা ছিল আল্লাহ এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের মাঝে জীবন পরিচালিত করা। আমাদের পাপের কারণে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে মহামারি নামক করোনা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। সুরা রুম, আয়াত-৪১)

এই আয়াতের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেলো, জলে স্থলে যত বিপর্যয় ঘটে সব মানুষের নিজ মন্দকর্মের কারণেই।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একবার  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করে ছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল বিপদ কখন আসে। প্রতুত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘যখন মানুষের মধ্যে নেশাদ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যায় এবং মানুষ প্রকাশ্যভাবে জিনায় লিপ্ত হয়। তখন জমিনে নানারকম বিপর্যয় দেখা দেয়। আর সেই  বিপর্যয় কখনো আসমান থেকে আল্লাহ পাঠান আবার কখনো জমিন থেকে। আসমান থেকে যে বিপর্যয় আসে তা হচ্ছে কখনো প্রবল বৃষ্টির মাধ্যমে আবার কখনো শিলা বৃষ্টির দ্বারা আবার কখনো কঠিন বজ্রধ্বনি ইত্যাদি হয়ে থাকে।’

জমিন থেকে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তা হচ্ছে কখনো বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে আবার কখনো হারিকেন কিংবা করোনা দ্বারা আবার কখনো ভূমিকম্পের দ্বারাও হতে পারে। উল্লেখিত সবগুলো হলো খোদাই গজব। এই গজব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাওবা এবং ইস্তিগফার করা। নিজে গুনাহ পরিহার করে বেশি থেকে বেশি তাওবা ইস্তিগফার করা এবং অন্যকে এ ব্যাপারে আহ্বান করা। নতুবা হতে পারে আজাব-গজব একের পর এক আসতেই থাকবে। মুয়াত্তায়ে মালেক ও ইবনে মাজাহ শরীফে ইবনে উমর এবং ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সমপ্রদায়ের মধ্যে বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি দেখা দেয়।’

আসুন সবাই নিজেদের বিবেক জাগিয়ে অনুতপ্ত হই আমাদের প্রভুর নিকট। তিনি যেন আমাদের ওপর থেকে করোনা নামক  মহামারি উঠিয়ে নেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

 

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আনওয়ারিয়া (মাদরাসা বরমী), শ্রীপুর গাজীপুর

সদস্য, বাংলাদেশ কওমি তরুণ লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads