• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯
ফরজ গোসল : পদ্ধতি ও সতর্কতা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ফরজ গোসল : পদ্ধতি ও সতর্কতা

  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০২১

মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। মানুষের জন্য আল্লাহর বিধান মানা অত্যাবশ্যক বা জরুরি। আল্লাহতায়ালা মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য নিয়ম-নীতি তৈরি করে রেখেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। একজন মুসলমান কী খাবে, কী পরবে? কীভাবে তার প্রাত্যহিক জীবনে চলাফেরা করবে তার পুরো নির্দেশনাবলি আল্লাহতায়ালা প্রিয় হাবীব মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে সমুদয় মানুষের নিকট  পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে একেবারে সহজ সরলভাবে সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। যা হুকুমভেদে আমাদের ওপর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত হয়ে থাকে।

আল্লাহতায়ালা মানুষদেরকে কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেত্র বিশেষ আদেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে আল্লাহর একটি  আদেশ হচ্ছে; তোমরা সবসময়ই পবিত্র অবস্থায় থাকবে। যদি কোনো কারণে অপবিত্র হয়ে যাও, তাহলে তৎক্ষণাৎ তোমরা পবিত্র হয়ে নেবে। ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৬) গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হবারও বিভিন্ন ধরন ফিকাহ এবং হাদিসের কিতাবে বর্ণিত আছে। যেমন- ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব গোসল । এই পার্থক্য ক্ষেত্র বিশেষ হয়ে থাকে। যেমন; সহবাসের পর (সুরা মায়েদা, আয়াত-৬), স্বপ্নদোষ হবার পর, মহিলাদের রক্তস্রাবের পর। (বুখারি, হাদিস নং-৩০৯) সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর। (কানযুল উম্মাল-৯/১১০৯) ইত্যাদি কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। একটি মাসয়ালা মনে রাখা উচিৎ। সেটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের ওপর ফরজ। (বুখারি, হাদিস নং-১১৭৫)

আবার কখনো গোসল আমাদের ওপর সুন্নাতও হয়ে থাকে। যেমন- জুমার দিনে নামাজের পূর্বে। (তিরমিযি, হাদিস নং-৪৮৬) দুই ঈদে নামাজের আগে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩০৬) এমন কী ইহরাম পরিধানের জন্য। (তিরমিযি, হাদিস নং-৭৬০) কখনো বা গোসল মুস্তাহাব হয়ে থাকে। যেমন-কদরের রাতে। (বুখারি, হাদিস নং-৩৪) সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের আগে। (তিরমিযি, হাদিস নং-২৭২৩) শিঙা লাগানোর পর। (আবু দাউদ, হাদিস, হাদিস নং-২৯৪) মাতাল বা বেহুঁশ ব্যক্তির স্বাভাবিক জ্ঞান ফেরার পর। (বুখারি, হাদিস নং-৬৪৬) ইসলামধর্ম গ্রহণ করার সময়, যদি সে পাক থাকে তবু গোসল করা মুস্তাহাব। কিন্তু সে যদি নাপাক থাকে, তবে তো গোসল করা ফরজ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারীর জন্য। (আবু দাঊদ, হাদিস নং-২৭৪৯)

পৃথীবির যে কোনো কাজের একটা পদ্ধতি  বা রুটিন আছে। পদ্ধতি  ছাড়া কাজ হয় না। এমনিভাবে ফরজ গোসলেরও কিছু শর্ত বা নিয়ম আছে। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে আমরা পবিত্রতা অর্জন করতে পারি না। আমরা ঠিকই বর্ণিত কারণগুলোর পর ফরজ গোসল করে থাকি, কিন্তু গোসলের নিয়ম না জানার কারণে বা ফরজ গোসলে কী কী কাজ করতে হয় তা অজ্ঞতার ফলে আমাদের গোসল হয় না। আমরা পবিত্র হতে পারি না, অপবিত্র থেকে যাই। তাই আমাদের নামাজও হয় না। কেননা আপনি তো অপবিত্র হওয়ার পর পবিত্রই হননি!

আমরা আমল করলাম, নামাজ পড়লাম, এগুলো আমাদের কিছুই কবুল হচ্ছে না। সাওয়াব হচ্ছে না বরং উল্টো গুনাহ হচ্ছে। কারণ, আমরা পবিত্রতাই অর্জন করতে পারিনি। অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাজির হচ্ছি। যদি আমাদের ওপর গোসল ফরজ হয়, তাহলে সে সময় নিয়ম মেনে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ করতে হবে। তখন আমাদের আমল কবুল হবে। এর জন্য আমাদের জানতে হবে ফরজ গোসলের পদ্ধতি। কীভাবে গোসল করলে আমরা অপবিত্র থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পারবো। আর আমাদের ফরজ গোসল সম্পূর্ণ হবে।

গোসলের ফরজ তিনটি কুলি করা (বুখারি, হাদিস নং-২৫৭), নাকে পানি দেওয়া (বুখারি, হাদিস নং-২৬৫), পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো (আবু দাউদ, হাদিস নং-২১৭) আমাদের ওপর যখন গোসল ফরজ হয়, তখন আমরা নিম্নোক্ত পন্থাগুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করব। খুব গুরুত্বসহকারে খেয়াল করব। একটু সতর্ক থাকলেই আপনি হবেন পবিত্র। অন্যথায় এতো কষ্ট করে আমরা যেই আমলগুলো করছি; একটুখানি অজ্ঞতার কারণে, অসতর্কতার ফলে জান্নাত কামানোর পরিবর্তে জাহান্নাম কামিয়ে ফেলছি। যা একজন সচেতন মুসলমান কখনোই করতে পারে না।

ফরজ গোসলে খেয়াল রাখা জরুরি : সহবাস বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর প্রথমে প্রস্রাব করবেন। তারপর গোসলের জন্য আসলে লেগে থাকা শুকরাণুর জায়গাগুলো পরিষ্কার করে নেবেন। লজ্জাস্থান ধৌত করে নেবেন। ভালো করে গরগরা সাথে কুলি করবেন। নাকের ছিদ্রের ভেতর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দ্বারা ভালো করে পানি পৌঁছাবেন। হাত ভিজিয়ে কানের ছিদ্র মুছবেন। নাভির ভেতর পরিষ্কার করে পানি দেবেন। নারীরা তাদের নাকফুল নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাবেন। খেয়াল করতে হবে পুরষদের জন্য যেনো দাড়ি, চুল, গোফের গোড়াসমূহ ভালোভাবে ভিজে। অথবা কারো হাতে যদি ঘড়ি বা আংটি থাকে তা নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাতে হবে। তবে নারীদের চুল বাঁধা অবস্থায় না খোলে গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি নয়। আর যদি আগ থেকেই খোলা থাকে, তাহলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি। অনেক মেয়েদের দেখা যায় তারা হাতে নেইলপালিশ, রঙ  ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য উচিৎ  হচ্ছে এগুলো উঠিয়ে তারপর পানি পৌঁছানো। (রদ্দুল মুহতার-১/১৪২)

লেখক :উসমান বিন আব্দুল আলিম

মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুর, সাভার, ঢাকা

osmangoninomani@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads