• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ ও হারাম

  • প্রকাশিত ২৭ আগস্ট ২০২১

মো. নাজমুচ্ছাকিব

 

 

মহান আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদের ওপর সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে করেছেন হালাল। সুদের মাধ্যমে ধনী আরো ধনী হয় গরিব আরো গরিব হয়। বর্তমান বিশ্ব বাজারে এই সুদি কারবারের জন্য ধনী দেশগুলোকে গরিব দেশগুলো পিছে ফেলতে পারছে না। কিন্তু আমরা যদি ইসলামের শিক্ষা মাথায় নিয়ে সুদ মুক্ত যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়তে পারতাম তাহলে বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের মাঝে অর্থনৈতিক অবস্থা সম্মতায় থাকত। সুদের কারবার মহামারির ন্যায় সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, সুদের কারবার ছাড়া বড়মাপের কোনো কিছু করার কথা কল্পনা করা যায় না। ফলে অভিশপ্ত এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।

 

সুদ তো এক প্রকার আতঙ্ক হিসেবে ছিলো কিন্তু এর মাঝে আবার এসেছে মাইক্রো-ক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণের আপদ। এটার কারণের দেশের খুদে উদ্যোক্তারা তেমন কিছু করতে পারছে না। কৃষকরা ঋণের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ ক্রয় করে তার কিস্তি মিটাতে মিটাতেই সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাবকে কাজে লাগিয়ে চড়া সুদের কড়া শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ঝুকিমুক্ত লাভজনক ব্যবসা পরিচালনার নাম ক্ষুদ্রঋণ। ক্ষুদ্রঋণের নামে সুদী লোন বিতরণকারী প্রচুর ব্যাংক, সমিতি ও নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন লোকের খোঁজ আছে কি না তা বলা মুশকিল। তবে সর্বস্বান্ত মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। তাই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

 

একজন মুসলিম হিসাবে কোন কাজ করার আগে আমাদের কোরআন ও সুন্নাহ দেখা দরকার এবং সে বিষয়ে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম কী বলেছেন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এর পর অন্যদিক বিবেচ্য। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে সুদ যেহেতু অন্যতম হাতিয়ার- তাই তাতে কোনো মুসলিম অংশ নিতে পারেন না। কারণ ইসলামে সুদ হারাম। আর কোনো হারাম কাজে কোনো মুসলিম অংশ নিতে পারেন না।

 

কোরআনে কারিমে সুদের ভয়াবহতার কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের ময়দানে দন্ডায়মান হবে সে ব্যক্তির মতো; যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে- ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদি লেনদেনের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে করেছেন বৈধ আর সুদ করেছেন হারাম।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি সুদ পরিহার না করো, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও।’ (সূরা আল বাকারা : ২৭৯)

 

সাহাবি হজরত সামুরা ইবেন জুনদাব (রা.)-এর বর্ণনায় সুদের ভয়াবহতা বর্ণনা করে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুজন লোক আমার নিকট আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা এক রক্তের নদীর পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় দেখতে পেলাম একজন লোক নদীর মাঝে দাঁড়ানো। আরেকজন লোক নদীর পাড়ে দাঁড়ানো। পাড়ে দাঁড়ানো লোকটির সামনে অনেকগুলো পাথর। নদীর মাঝের লোকটি পাড়ের দিকে আসতে ইচ্ছা করলে পাড়ের লোকটি তার মুখে সজোরে এমনভাবে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় আগের জায়গায় পৌঁছে যায়। সে যতবারই পাড়ে আসতে চায়, ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। ফলে সে আগের জায়গায় চলে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ লোকটি কে যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে? উত্তরে বলা হলো, এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি।’ (সহিহ বুখারি : ২০৮৫) অন্য বর্ণনায় সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষী ও সুদের লেখকের ওপর।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৩৩৩৩)

 

সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার এ যুগে সুদের সংস্পর্শের বাইরে থেকে মানুষ চলবে কী করে? ইসলাম এরও সমাধান দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, এর বিকল্প হতে পারে- করজে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ। করজে হাসানা অতিপুণ্যময় একটি আমল এবং মানবতার কল্যাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী। ঋণদাতা কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে অতিভাগ্যবান মানুষ। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর কোনো জুলুম করে না। তার সাহায্য ত্যাগ করে না। যে তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে থাকেন। আর যে কোনো মুসলমানের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করে দেবেন।’ (সহিহ বোখারি: ২৪৪২)

 

ঋণ দেওয়া মূলত সমস্যায় জর্জরিত ও মুখাপেক্ষীকে সাহায্য করা। টাকার অভাবে তার ওপর যে বিপদ নেমে আসতো ঋণ দিয়ে সে বিপদ দূর করা। তাই ঋণের ব্যাপারটিও বর্ণিত হাদিসের আওতায় অবশ্যই পড়বে। কাজেই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আল্লাহতায়ালা ঋণদাতার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং কিয়ামতের ময়দানে তার বিপদ দূর করে দেবেন। আর আল্লাহতায়ালা যার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং কিয়ামতের কঠিন দিনে বিপদ দূর করবেন; তার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে?

 

উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বলা চলে, করজে হাসানা খুবই পূণ্যময় একটি আমল ও অতি উত্তম ইবাদত। আর ঋণগ্রহীতা ঋণ আদায়ে অক্ষম হলে তা মাফ করে দেওয়া আরও ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। দুনিয়ায় এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়, যারা ঋণ নেওয়ার পর তা আদায়ের কথা ভুলে যায়। অনেকেই আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করে না, সময়ক্ষেপণ করে। কেউ কেউ তো আবার পুরো টাকাটাই মেরে দেয়। ঋণ নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষ আহত-নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। ফলে মানুষের মনে করজে হাসানার ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের এমন দুষ্টুদের কারণে সমাজের ভালো মানুষগুলো বিপদের সময় করজে হাসানা পায় না। এজন্য আমাদের উচিত ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী জীবন যাপন করা। সুদমুক্ত জাকাতভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে সকলে মিলে সুখে শান্তিতে বসবাস করা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

snazmussakib01@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads