• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
কথাবার্তায় মুমিনের শিষ্টাচার

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

কথাবার্তায় মুমিনের শিষ্টাচার

  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

মুফতি আতিকুল্লাহ বিন আসাদ

পার্থিব জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়। পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে সালাম আদান-প্রদান করা, কুশল বিনিময় করা বা ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করা, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে মুমিনকে আন্তরিক হতে হবে। যে কথায় ঝগড়া বা তর্ক সৃষ্টি হয় তা পরিহার করা কর্তব্য। বড়দেরকে সম্মানজনক সম্বোধন করে কথা বলা ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। মাতা-পিতার সঙ্গে কথা বলা সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভদ্রভাবে কথা বল।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৩) সর্বসাধারণের সঙ্গে কথা বলা সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুল! আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন সেই সব কথা বলে যা উত্তম। কেননা শয়তান (খারাপ কথা দ্বারা) তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। আর শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৫৩)

উত্তম কথা বলতে কেবল সুমিষ্ট স্বরে কথা বলাই নয়; বরং সদুপদেশ দেওয়া, সুশিক্ষা দেওয়া, সৎ পরামর্শ দেওয়া, মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা, ভালো কথা দিয়ে মন্দ কাজের প্রতিবাদ করা প্রভৃতি উত্তম কথার অন্তর্ভুক্ত। হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, মানুষের সঙ্গে উত্তম বলার মানে হচ্ছে, ‘মানুষকে ভালো কথা বলতে থাক; মন্দ কথা থেকে নিজেকে বিরত রাখ; পরস্পর বিনম্র ব্যবহার কর এবং বিনম্র ভাষায় কথা বল।’ (তাফসিরে ইবনে আব্বাস) ভালো কথার দ্বারা মানুষের কল্যাণ লাভ হয়। মানুষ মুসলিম হোক কিংবা বিধর্মী হোক সবার সঙ্গে উত্তম কথার দ্বারা ভাব বিনিময় করা ইসলামের সুমহান শিক্ষা। যার প্রমাণ হলো, নিজেকে প্রভু দাবিদার ফেরাউনের কাছে হজরত মুসা ও হারুনকে (আ.) যখন পাঠানো হয়েছিল, তখন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন, ‘তোমরা তার সঙ্গে বিনম্র ভাষায় কথা বলবে। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সুরা তহা, আয়াত নং-৪৪) মুমিন ব্যক্তি কখনো রূঢ় বা কর্কশ স্বরে কথা বলবে না। হজরত লোকমান (আ.) তার পুত্রের প্রতি অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। তার কিছু উপদেশ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এক স্থানে তিনি বলেন, ‘সংযতভাবে তুমি তোমার পা পরিচালনা করবে আর তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখবে। নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গাধার কণ্ঠস্বরই সবচেযে অপ্রীতিকর।’ (সুরা লোকমান, আয়াত-১৯)

উত্তম কথায় মানুষের মর্যাদা উন্নতি হয়। দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যম। একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার দোজখের বর্ণনা দিচ্ছিলেন এবং তার চেহারা মোবারকে যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠেছিল। তারপর তিনি ইরশাদ করলেন, ‘খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও তোমরা দোজখ হতে মুক্তি লাভ কর। যদি তাও না পার, তাহলে উত্তম কথার বিনিময়ে মুক্তি লাভ কর।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-২৯৫৩)। যদি কোনো কারণে উত্তম কথা বলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তবে সেক্ষেত্রে ধৈর্যের সঙ্গে চুপ থাকা উচিত।

অর্থহীন কথাবার্তা পরিহার মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস নং-৪৭) মুমিন কথাবার্তায় সংযত হয়। সে কথার মাধ্যমে কাউকে আহত করে না। মানুষ কথার কারণে পরকালে পাকড়াও হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ তার অসংযত কথাবার্তার কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩৯৭৩) সর্বোপরি ভালো কথা বলার সময় বিনম্র ও শালীন হতে হবে। আমরা কখনো কখনো অন্যকে দোষারোপ করি, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করি। এ ধরনের কাজ একজন মুমিনের জন্য কখনো শোভা পায় না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-২০৪৩)

 

লেখক : খতিব, রোশাদিয়া শাহী জামে মসজিদ, উত্তরা, ঢাকা

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads