• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২১

দাজ্জাল শব্দের অর্থ মিথ্যুক, প্রতারক, ভণ্ড, পথভ্রষ্টকারী মিথ্যা দাবিদার, ছদ্মবেশী। হাদিসে যাকে বলা হয়েছে, ‘আল মাসিহুদ্দাজ্জাল’। আর বাইবেলে বলা হয়েছে, AntiChrist বা খ্রিস্টবিরোধী। দুনিয়াতে মুসলিমদের জন্য যত বড় বড় ফিতনার আবির্ভাব হয়েছে এবং হবে দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় ফিতনা। সকল নবী-রাসূলই তাদের উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইবনে উমর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, “আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মতকে বলেন নাই। তা হল, দাজ্জালের এক চোখ অন্ধ হবে কিন্তু আল্লাহ অন্ধ নন।” (বুখারি ও মুসলিম)

দাজ্জাল এমন অলৌকিক ও বিস্ময়কর বিষয়াদি প্রদর্শন করবে যেগুলো দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ইমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে সতর্ক ও সচেতন করার উদ্দেশ্যে তার শারীরিক গঠন বর্ণনাপূর্বক তার নানা প্রতারণা, ভন্ডামি ও গোমরাহি মূলক কার্যক্রম তুলে ধরেছেন এবং দাজ্জলের ফেতনা থেকে আত্মরক্ষার বিভিন্ন উপায়-উপকরণ বর্ণনা করেছেন। আমাদের কর্তব্য, তার ব্যাপারে আরও বেশি জানা, সচেতন হওয়া এবং তার থেকে আত্মরক্ষার উপায়-উপকরণগুলো অবলম্বন করা।

জুমার দিনের সাপ্তাহিক একটি আমল ‘সুরা কাহফ’ তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করতে বলেছেন। দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় রয়েছে সুরা কাহফে। সুরা কাহফ তেলাওয়াত করে এর মর্মার্থ ভালোভাবে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী আমল করলে দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

১. সৎ মানুষের সুসম্পর্ক রাখা: আল্লাহ তাআলা সুরা কাহফের ২৮নং আয়াতে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচতে প্রথম উপায় হলো সৎ মানুষের সংস্পর্শে থাকা। এ কথার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন এভাবে- 'আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি; যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৮)

২. দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করা: দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দ্বিতীয় উপায় হলো দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতার বিষয়গুলো হূদয় দিয়ে উপলব্দি করা। যাতে দুনিয়ার কোনো বাস্তবতায় মানুষকে ঈমানহারা করতে না পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতাপাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুষ্ক চর্তু-বিচর্তু হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৪৫)

৩. ধৈর্যশীল থাকা: দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার তৃতীয় উপায় হলো ধৈর্যশীল থাকা। কেননা কোরআনুল কারিমে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত খিজির আলাইহিস সালামের জ্ঞানের এ ঘটনায় ধৈর্যের বিষয়টি ওঠে এসেছে। জ্ঞানী ব্যক্তিরা ধৈর্যের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করে থাকেন। এ ধৈর্যের শিক্ষায় মুমিন দাজ্জালের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাবে। বিষয়টি বুঝতে পুরো ঘটনাটি পড়া আবশ্যক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘মুসা বললেন, আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোনো আদেশ অমান্য করব না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৬৯)

৪. বেশি বেশি সৎ কাজ করা: দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে দুনিয়ায় বেশি বেশি সৎ কাজ সম্পাদন করা। যা বাদশাহ জুলকারনাইন করেছেন। অত্যাচারী ইয়াজুজ-মাজুজের নির্যাতন থেকে জনপদের মানুষকে নিরাপত্তা দান করতে তিনি তৈরি করেছিলেন বিশাল প্রাচীর। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)

৫. আল্লাহর দিকে আহ্বান: দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার পঞ্চম উপায় হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। সুরা কাহফের শুরু দিকে মহান আল্লাহ এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন এভাবে- ‘আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব নাজিল হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোনো আশ্রয় স্থল পাবেন না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৭)

৬. পরকালের কথা স্মরণ করা: দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচতে পরকালের কথা বেশি স্মরণ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। আর তাতে এ ভয়াবহ ফেতনা থেকে মুক্তি পাবেন মুমিন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উন্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবে : তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না। আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত্র দেখবেন। তারা বলবে : হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত ৪৭-৪৯)

সুরা কাহফ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমলি সুরা। সুন্নাতের অনুসরণে এ সুরার তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন মুমিন মুসলমানকে দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা থেকে মুক্ত করবে। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। কেননা হাদিসের একাধিক বর্ণনা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে, তাকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ) ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম)

দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুক্তির দোয়া: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে কোরআন মাজিদের সুরা শেখাতেন ঠিক তেমনিভাবে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য এ দোয়াটিও শেখাতেন। তাহলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিন ফিতনাতি মাসিহুদ দাজ্জাল।’ (বুখারি) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অভিশপ্ত দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই।’

আর যে মৃত্যুবরণ করলো সে দুনিয়ার সব ধরণের ফিতনা-ফ্যাসাদ বেঁচে গেল। সুতরাং কবরের লোকজনকে দাজ্জালের ফেতনা স্পর্শ করতে পারবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দাজ্জালের খবর শুনে কেউ যদি তার কাছে না যায় তাহলে সেও ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে আর যারাই তার কাছে যাবে তারাই তার ফেতনায় পতিত হবে। যেমন : আবুদ দাহমাহ রাহ. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইমরান ইবনুল হুসাইন রা.-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম! যে কোনও ব্যক্তি তার নিকট এলে তাকে ইমানদার মনে করে তার অনুসরণ করতে শুরু করবে, তার মধ্যে যে সব সংশয় সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে।’ (আবু দাউদ) এ হাদিস থেকে জানা গেল, দাজ্জাল থেকে দূরে অবস্থানকারী ব্যক্তি তার ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। আল্লাহ আমাদেরকে দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখিকা :সাবরিনা ওবায়েদ আনিকা

শিক্ষার্থী (বাংলা বিভাগ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সদস্য, বাংলাদেশ তরুন লেখক ফোরাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads