• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ

  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১

কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। তেমনি মুমিনরা বিশ্বাস করে জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য এবং এ দুটি বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে, আর তা সর্বদা থাকবে। জান্নাতবাসীদের নিয়ামত কখনো শেষ হবে না, অনুরূপ জাহান্নামিদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ চিরস্থায়ী শাস্তির ফায়সালা করেছেন তার শাস্তি কখনও বিরত ও শেষ হবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একদা জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা থাকবে। আর জান্নাত বলল, দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভিতরে বসবাস করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’ (সহিহ মুসলিম)

মিজান ও পুলসিরাত : আল্লাহ তায়ালা বিচার দিবসে মীজান স্থাপন করবেন, বান্দাদের আমল মাপার ও তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্য। এর দুটি পাল্লা ও রশি রয়েছে। কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নবী কারীম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাতের। সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। পবিত্র কোরআনুল কারীমে তায়ালা বলেন, ‘আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারি হবে তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সেই সব লোক, যারা নিজদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি (অস্বীকার করার মাধ্যমে) জুলম করত।’ (কুরআন আরাফ, আয়াত : ৮-৯)

মুসলিমরা পুলসিরাত বিশ্বাস করে। পুলসিরাত একটি পারলৌকিক সেতু, যা পার না হয়ে হাশরের ময়দান থেকে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। আর তা হলো জাহান্নামের ওপর স্থাপিত পুল, যা ভয়-ভীতি সন্ত্রস্ত পথ। এর উপর দিয়ে মানুষ জান্নাতের দিকে অতিক্রম করবে। কেউ অতি দ্রুত অতিক্রম করবে আবার কেউ অনেক ধীর গতিতে। সকলেই অতিক্রম করবে তাদের কর্মের ফলাফল অনুপাতে। পুলসিরাত হবে তরবারীর চেয়ে ধারালো, আর চুলের চেয়ে সূক্ষ্ম ও পিচ্ছিল জাতীয়। এতে আল্লাহ যাদের পা স্থির রাখবেন, শুধু তাদেরই পা স্থির থাকবে। আর তা অন্ধকারে স্থাপিত হবে। সর্বপ্রথম নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অতঃপর তাঁর উম্মাত পুলসিরাত পাড়ি দিবেন।

জান্নাত : জান্নাত অর্থ বাগান বা উদ্যান। ফারসি ভাষায় বলা হয় বেহেশত। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। ইসলামি পরিভাষায় আখিরাতে ঈমানদার ও নেককার বান্দারের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে জান্নাত বলা হয়। যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে ফুলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সংবলিত মনোমুগ্ধকর বাগান। যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝরনাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।

জান্নাত চির শান্তির জায়গা। সেখানে সবকিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে। জান্নাতে থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর। বস্তুত আনন্দ উপভোগের জন্য সবরকমের জিনিসই জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর।’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ্, আয়াত ৩১) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আমি আমার পূণ্যবান বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি; যা কোন চোখ কোনোদিন দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন শোনে নি, আর মানুষের অন্তরও কোনোদিন কল্পনা করতে পারে নি।’ (মিশকাত)

জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিস্কের মতো। জান্নাতিদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু থাকবে না। তাদের চিরুনি হবে সোনার। ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ। আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে। স্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনা। সবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা। (সহিহ বুখারি)

জান্নাতের মোট আটটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার পাশের দৈর্ঘ্য ‘মক্কা’ থেকে ‘হাজর’ এর দূরত্বের সমান। আর এমন দিন আসবে যে দিনে তা ভিড়ে পরিপূর্ণ হবে, আর জান্নাতে ন্যূনতম মর্যাদার অধিকারী যে হবে তার জন্য দুনিয়া ও আরো দশ দুনিয়ার পরিমাণ জায়গা হবে। আট জান্নাতের নাম হলো- ১. জান্নাতুল ফিরদাউস ২. জান্নাতুল মাওয়া ৩. দারুল মাকাম ৪. দারুল কারার ৫. দারুন নাঈম ৬. দারুল খুলদ ৭. দারুস সালাম ৮. জান্নাতু আদন। সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হলো জান্নাতুল ফিরদাউস। এর ছাদ হলো আল্লাহর আরশ।

জান্নাত লাভের উপায় : পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “(হে নবী) যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোনো ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটাই তো আগে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল।’ আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী।” (বাকারা, আয়াত ২৫) জান্নাত হলো মুমিনদের এবং পূণ্যবানদের বাসস্থান। সুতরাং জান্নাত লাভের জন্য দুনিয়াতে সর্বপ্রথম ঈমান আনতে হবে। আকাইদের সব বিষয়ের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে এবং নেক কাজ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নামাজ জান্নাতের চাবি।’ অতএব নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত সালাত সুন্দরভাবে আদায় করতে হবে। সালাত আদায়ের পাশাপাশি রোজা, জাকাত আদায় ও হজ পালন করতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। অতঃপর সকল অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

জাহান্নাম : জাহান্নাম হলো আগুনের গর্ত, শাস্তির স্থান। ইসলামি পরিভাষায় আখিরাতে কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে তাকে জাহান্নাম বলা হয়। জাহান্নাম খুবই কষ্টকর ও ভয়ংকর স্থান। সেখানে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেখানে পাপীদের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে এবং বড় বড় সাপ, বিচ্ছু ও কীটপতঙ্গ দংশন করবে। জাহান্নামের আগুন হবে দুনিয়ার আগুন থেকে সত্তর (৭০) গুণ বেশি উত্তপ্ত। জাহান্নামবাসীদের খাবার হবে যাক্কুম নামক বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। যা তারা খেতে পারবে না বরং গলায় আটকে যাবে। অতঃপর পানীয় হিসেবে দেওয়া হবে উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। সেখানে পাপীদের মৃত্যু হবে বরং তারা চিরকাল ধরে শাস্তি ও কষ্ট ভোগ করতে থাকবে।

জাহান্নামিদের বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।’ (সূরা নিসা ৫৬) জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি। যথা- ১. জাহান্নাম ২. হাবিয়া ৩. জাহিম ৪.সাকার ৫. সাইর ৬. হুতামাহ ৭. লাযা।

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় : মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের প্রতি যারা ইমান আনে না তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তাছাড়া যেসব লোক দুনিয়ায় অন্যায় ও পাপ কাজ, অশ্লীল ও অনৈতিক করে বেড়ায় তারাও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। সুতরাং আমরা এসব কাজ থেকে বিরত থাকবো। আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করবো। তাহলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাবো। সুতরাং আমরা সবসময় নেক আমল করব। কোন অবস্থাতেই আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ অমান্য করব না। তাহলেই আমরা আখিরাতে জান্নাত লাভ করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক : শাহাদাৎ হোসেন

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা

shahadathossain9283@gmail

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads