• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
আইয়ুব বাচ্চু কিন্তু লাকি!

আইয়ুব বাচ্চু

সংগৃহীত ছবি

শোবিজ

আইয়ুব বাচ্চু কিন্তু লাকি!

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৮

গত সংখ্যার পর ...

 

অস্থিরতা নিয়ে রাত পার হলো ঘুমহীন। উঠেই বাচ্চু ভাইকে ফোন, দুটো রিং বাজতেই ধরলেন। বললাম, ভাই আমি তাহলে ইউনিট নিয়ে চলে আসব ৭টায়? বললেন ৭টায় না তুমি ৮টার দিকে চলে এসো। এদিকে আমার এই ভোগান্তির গল্প পুরো চ্যানেল জেনে গেছে। ইউনিট নিয়ে বাচ্চু ভাইয়ের স্টুডিওর সামনে গেলাম পৌনে ৮টায়। স্টুডিওতে তালা দেখে আমার কলিজা ধক করে উঠল। চেহারা দেখে তুফান ভাই বলল, টেনশন করবেন না। কল করেন ৮টায় আসবেন বলছে না, বাসা কাছে চলে আসবে। ফোন করতেই মনে হলো হার্ট অ্যাটাক করবে। আমার ঘাম শুরু হয়ে গেছে। ফোন কেটে বাচ্চু ভাই মোবাইল অফ করে দিলেন। কি করি? এমন কেন করছেন বাচ্চু ভাই? আমি একটার পর একটা ফোন আর এসএমএস পাঠাচ্ছি। ‘ভাই আমি আপনার স্টুডিওর সামনে অপেক্ষা করছি’। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সব কিছু ভাড়ার টাকা শোধ করলে আজকের পর কোনো টাকাই থাকবে না পরের শুটিং করার জন্য। তুফান ভাই যদিও বলেছেন তিনি টাকা নেবেন না। কিন্তু শুভেচ্ছাখ্যাত আবদুন নুর তুষার ভাই বলে দিয়েছেন তোমার কাজ হোক আর না হোক আমার ক্যামেরা ভাড়া দুই শিফটের ৬ হাজার টাকা দিতেই হবে। কিছু করার নেই, তোমার জন্য আমি তো আর লোকসান দিতে পারি না।

বিরক্তি ধরে যাচ্ছে এসব লোকের ওপর। হাবি জাবি সব ভাবছি আর বাচ্চু ভাইকে ফোন করেই চলছি। বাচ্চু ভাইকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে নতুন কোনো পর্ব বানাব সেই টাকাও নেই। সব টাকা শেষ। এদিকে বাচ্চু ভাইয়ের ওপর রক সম্রাট গুরু আজম খানের একটা কমেন্টসও ভিডিও করে ফেলেছি। যেখানে আজম খান বলেছেন, ‘বাচ্চুকে রিকোয়েস্ট করব সে যেন কোনো সিগারেটের বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে আর ভয়েস না দেয়’। উল্লেখ্য, বাচ্চু ভাই নাসির গোল্ড সিগারেটের একটা জিঙ্গেল করার পরই এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন আজম খান। যেটি আমরা বাচ্চু ভাইয়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাকে দেখিয়ে বলব— গুরু আজম খান কী বলেছে আপনার সম্পর্কে শুনুন। বাচ্চু ভাই সেটি দেখে তার মতামতে কিছু বলবেন। কিন্তু এখন তো সব গেল। টাকার চেয়েও বড় যেটি সম্মান। এত করে বলেছি পুরো চ্যানেল আই জানে নতুন একটা অনুষ্ঠান করছি ‘ফেইস টু ফেইস’ নামে। প্রথম পর্বে থাকবেন আইয়ুব বাচ্চু।

এমন একটা অবস্থা তৈরি হলো যে, কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আমি মোবাইল ফোন হাতে চেষ্টা করেই যাচ্ছি বাচ্চু ভাইয়ের মোবাইলে, কিন্তু মোবাইল ফোন বন্ধ। আমার অন্য হাতে বাচ্চু ভাইকে উপহার দেওয়ার জন্য দুটি দামি পারফিউমের প্যাকেট। রাত ১১টায় চ্যানেল আইতে ফিরলাম বাচ্চু ভাইয়ের দেখা পেলাম না। হেলাল ভাই বললেন, ‘আজকেও হয়নি? এই একটা সমস্যা ওনার। তবে বাচ্চু ভাই খুব লাকি ওনাকে দিয়ে যা কিছু শুরু হয় সেটা হিট হয়। তার প্রমাণ চ্যানেল আই।’ বললাম আমি শেষ হয়ে গেলাম আর আপনি বলেন লাকি! হেলাল ভাইয়ের সঙ্গে নান্টু ভাইও তাল মিলিয়ে বললেন, ‘আসলেই বাচ্চু ভাই লাকি। চ্যানেল আইয়ের থিম মিউজিক বাচ্চু ভাই করেছেন, দেখেন সবই হিট।’ প্রচণ্ড রাগ আর কষ্টে চ্যানেল আইয়ের সিদ্ধেশ্বরী অফিস থেকে বের হলাম রাত ১টায়। আমি তখনো একটার পর একটা কল করে যাচ্ছি। রাত ৩টার দিকে মোবাইলে রিং হলো, বাচ্চু ভাই হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘ভাই আমি আসিফ বলছি, ভাই আমার সব টাকা পয়সা শেষ। কাল যদি আমার সাক্ষাৎকারটা না করে দেন আপনি আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেইলেন। বাচ্চু ভাই আমার আর কোনো উপায় নেই।’ বাচ্চু ভাই শুনে বলে, ‘কী বলিস আসিফ এগুলো? তুই তো দেখি অনেক সিরিয়াস হয়ে গেছিস। কালকে আমিই তোকে টেলিফোন করব। চ্যানেল আই থেকে ক্যামেরা আমি ব্যবস্থা করে দেব, সবকিছু আমি দেব।’ আমার বিশ্বাস হলো না।

পরের দিন আমাকে অবাক করে ১২টার দিকে বাচ্চু ভাইয়ের টেলিফোন এলো। ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভরাট গলায় বললেন, ‘কিরে পাগলা সব ঠিক আছে তো? আজকে আমার সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছি শুধু তোর অনুষ্ঠান করে দেওয়ার জন্য। আমি সারা দিন এবি কিচেনেই থাকব যখন খুশি চলে আসিস।’ সন্ধ্যা ৬টায় আমি যখন বাচ্চু ভাইয়ের স্টুডিওতে গেলাম। পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চু ভাই এসে বললেন, ‘আয় দেখ আমি তোর জন্য আমার স্টুডিওতে একটা সেট বানিয়েছি।’ ঢুকতেই দেখি দুটি বিরাট প্রজেক্ট টুয়ের স্পিকার পেছনে দিয়েছে। দুটি বেইজ এমপ’কে দুপাশে দিয়েছে, আমাদের দুজনের বসার জন্য। বাচ্চু ভাইয়ের হাতে একটা গোল হ্যাট। আমার হাতে দিয়ে বললেন— এটা আমি তোর অনুষ্ঠানে দেব দর্শকদের জন্য। আর আমার একটা গান ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’ মিউজিক ভিডিও বানিয়ে দিবি তুই। আমার দুদিনের সব কষ্ট রাগ যেন এক নিমিষে মিলিয়ে গিয়ে উনার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নিচু হয়ে গেল। কিছু বলতে পারছি না, চুপ করে শুধু শুনছি আর ভাবছি যে একটা মানুষ কতটা অসাধারণ হতে পারে। পুরো সাক্ষাৎকারটা শেষ হলো। বাচ্চু ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এই তো হয়ে গেল? খুশি পাগলা? তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।

আমরা চলে এলাম। এডিট করে সাগর ভাইয়ের হাতে মাস্টার ক্যাসেট দেওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে সিরাজ ভাইকে (শাইখ সিরাজ) ডেকে আমাকে নিয়ে প্যানেলে ঢুকে পুরো অনুষ্ঠানটা দেখে বললেন, ‘দিয়ে দাও।’ দেখলাম সত্যিই বাচ্চু ভাই আপনি লাকি। অনুষ্ঠান চ্যানেল আইতে প্রচার হলো ইউনিলিভারের স্পন্সরে। প্রথম পর্ব থেকেই ইউনিলিভারের স্পন্সর পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। আবারো প্রমাণিত হলো, আমি দেখলাম বাচ্চু ভাই আপনি সত্যিই লাকি। বাচ্চু ভাই দিয়ে শুরু হলো আমার ‘ফেইস টু ফেইস’ অনুষ্ঠানের পথ চলা।

একে একে অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এলেন আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, শমী কায়সার, জুয়েল আইচ, রফিকুন নবী (রনবী), কুমার বিশ্বজিৎ, আসিফ আকবর, ফাল্গুনী হামিদ, প্রয়াত গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত খালেদ খান (যুবরাজ), আজম খান, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, তানিয়া আহমেদ, ফেরদৌস আরা, সারা জাকের, আলি জাকের, ফেরদৌসী রহমান, পাপিয়া সারোয়ার, শাকিলা জাফর, মিলা হোসেন, আফজাল হোসেন, নৃত্যশিল্পী শিবলী, নিপা, নতুন প্রজন্মের ঈশিতা, মেহরিন, হুমায়ুন ফরীদি, আহমেদ ইউসুফ সাবের, বিপাশা হায়াতসহ অনেকেই। সঙ্গে অতিথি হয়েছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রায় সকলেই। সফলতার সঙ্গে পাক্ষিকভাবে প্রচার হয়েছে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান। প্রতিটি পর্বেই প্রমাণিত হয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু ভাই সত্যিই খুব লাকি। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের জীবনে গুড লাক হয়ে এসেছিলেন এই বিশাল মাপের মানুষটি। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনি সত্যিই ছিলেন অনেক লাকি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads