শ্রোতা-দর্শক এবং শিল্পীর মধ্যে সমন্বয় চমৎকার হলে যেকোনো স্টেজ শো যে অনন্য অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে যেন তারই প্রমাণ মিলেছে গেল শনিবার রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে ‘লেডিস আড্ডা’র আয়োজনে সংস্কৃতি পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন সেরা কণ্ঠের দুই সেরা শিল্পী ইউসুফ আহমেদ খান ও জিনিয়া জাফরিন লুইপা। অনুরোধে নজরুল সংগীত ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেবো খোঁপায় তারার ফুল’ গানটি যখন ইউসুফ পরিবেশন করেন তখন হলভরতি মহিলাদের মধ্যে ভালো লাগার এক অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। হলভরতি মহিলারা হাততালি দিয়ে ইউসুফের অসাধারণ গায়কির প্রশংসা করেন। তবে তার আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই লুইপার কণ্ঠে ‘এ শুধু গানের দিন এ লগনও গান শোনাবার’ গান যেন সবার মন ছুঁয়ে যায়।
প্রতিজনেই জানেন লুইপার কণ্ঠে গান এক অন্যরকম সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করে। লুইপার একক কণ্ঠে গাওয়া আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল, এ কী সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে, আমার বলার কিছু ছিল না, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, মধুমালতি ডাকে আয়’ এই পুরনো গানগুলো সবার প্রাণে প্রাণে এতটাই শিহরন সৃষ্টি করে যে যতটা সময় লুইপা গান গাইছিলেন ততটা সময়ই যেন উপস্থিত মহিলারা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাইছিলেন। গানে গানে প্রাণে প্রাণে এক অন্যরকম সুরের মূর্ছনার সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত।
একসময় ইউসুফ ও লুইপার কণ্ঠে ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘ও আমার বন্ধুগো চির সাথী পথচলার’ গান দুটিও সবার মধ্যে ভালোলাগার আবেশ সৃষ্টি করে। অনুরোধের গান শোনাতে গিয়ে ইউসুফও পরিবেশন করেন ‘চোখ যে মনের কথা বলে, সবাই তো মুখী হতে চায়, আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো, চেনা চেনা লাগে ও দিন যায় কথা থাকে’ গানগুলো।
মহিলাদের ভাষ্যমতে সাম্প্রতিক সময়ে এত চমৎকার অনুষ্ঠান উত্তরা ক্লাবে হয়নি। সময় স্বল্পতার কারণে একসময় গান পরিবেশনা শেষ করতে হয়। স্টেজ থেকে নামার পর একজন দর্শক লুইপার কাছে এসে বলেন, শাহনাজ আপার যে ছিল দৃষ্টির সীমানায় গানটি গেয়ে আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। লু্ইপা প্রত্যুত্তরে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ইউসুফ বলেন, ‘আমার সেদিন জ্বর ছিল। তারপরও চেষ্টা করেছি মনেরমতো করেই গান গাইতে। সবার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। এই মুগ্ধতার আবেশে নিজেকে রেখে সারা জীবন গান গেয়ে যেতে চাই।’ লুইপা বলেন, ‘যে ধরনের গান সেদিন গেয়েছি এই ধরনের গান শোনার জন্যও সমঝদার শ্রোতা-দর্শকের প্রয়োজন হয়। সেদিনের লেডিস আড্ডায় সে ধরনের শ্রোতা-দর্শক পেয়েছি বলেই গান গাইতেও কোনোরকম ক্লান্তি লাগেনি। প্রতিটি গানের শেষে যে পরিমাণ উৎসাহ পেয়েছি, শিল্পী হিসেবে এটা সত্যিকারের অর্জন বলে মনে হয়। তখন শিল্পী হিসেবে নিজের গায়কিকে সার্থক মনে হয়।’