• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

শোবিজ

ইত্যাদি এবার বান্দরবানে

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর ২০১৯

আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-কৃষ্টি-সভ্যতা-সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের টানে দেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঢেউ খেলানো পাহাড়-ঝরনা-নদী-সবুজ অরণ্য আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিচিত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ঘেরা অপরূপা বান্দরবানে। গত ১৬ নভেম্বর বান্দরবান শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ ফুট ওপরে টাইগার পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত অপরূপ পর্যটন কেন্দ্র নীলাচলে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি।

 মূলত পার্বত্য জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মাণ করা আলোকিত মঞ্চের সামনে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ধারণ করা হয়েছে এবারের ইত্যাদি। ধারণ উপলক্ষে রূপসী কন্যা বান্দরবানে ছিল উৎসবের আমেজ। অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও বান্দরবানের মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্য, পর্বত শৃঙ্গ, সবুজ-শ্যামলিমা গিরিশ্রেণীর দৃশ্য রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে গত কয়েকটি অনুষ্ঠানের মতো এবারো দিনের আলো থাকতেই ইত্যাদির ধারণ শুরু হয়। ইত্যাদির এই ধারণ অনুষ্ঠান চলে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

শিকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে যেমন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয়-তেমনি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেশি-বিদেশি অচেনা-অজানা স্থানের তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করছে। বান্দরবানের ইতিহাস, ঐতিহ্যর পাশাপাশি এবার রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত, দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। আসলে বান্দরবানে এমন এমন দুর্গম অঞ্চলও রয়েছে যেখানে টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ তো দূরের কথা, কোনো টিভি ক্যামেরাও কখনো পৌঁছেনি।

বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় সেসব স্থানে গিয়েও অনেক চিত্র ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চঞ্চল কান্তি চাকমার ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ওপর একটি মানবিক প্রতিবেদন। ২০১১ সালে প্রচারিত ইত্যাদিতে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে স্থাপিত ব্যতিক্রমধর্মী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কাইলাকুড়ী হেলথ কেয়ার সেন্টার এবং এর পরিচালক নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ৭৪ বছর বয়স্ক ডাক্তার প্রয়াত এড্রিক বেকারের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর হাসপাতালের নতুন ডাক্তার ভাই ও ডাক্তার দিদি জেসন-মারিন্ডি দম্পতির ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের ওপর রয়েছে একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। পৃথিবীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র সৈকতের পরিবেশের ওপর রয়েছে একটি সচেতনতামূলক প্রতিবেদন। এবারের বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের পাথর নগরী বলে খ্যাত মামাল্লাপুরামের কিছু স্মৃতিস্তম্ভের ওপর সচিত্র প্রতিবেদন।

মূল গান রয়েছে দুটি। ইত্যাদিতে সব সময় ভিন্ন আঙ্গিকে বিষয়ভিত্তিক গান প্রচার করার চেষ্টা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে রয়েছে বাংলা ও মারমা গানের দুজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর কণ্ঠে একটি অনুরাগের গান। শিল্পী দুজন হলেন বাংলা গানের আঁখি আলমগীর এবং মারমা গানের মান মান সিং। গানটি লিখেছেন প্রখ্যাত গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। এছাড়াও বান্দরবানের সবুজ-শ্যামল রূপ বৈচিত্র্য নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুর ও মেহেদীর সংগীতায়োজনে আর একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বান্দরবানের ১১টি নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি শিল্পীদের সমন্বয়ে শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন চথুইফ্রু মারমা, কমল, হ্লামেচিং মারমা ও তানজিনা রুমা, মারমা ভাষায় গানটি অনুবাদ করেছেন চথুইফ্রু মারমা, নৃত্য পরিচালনা করেছেন প্রাণ গোপাল।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান বান্দরবানকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা বান্দরবানের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে রচিত একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য।

নিয়মিত পর্বসহ এবারো রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ নাট্যাংশ। পর্যটকবান্ধব দোকান, সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্যবসা, অনলাইনে ভিক্ষা, ডিজিটাল শিক্ষক, মরণোত্তর প্রশংসা, স্বভাবে মানুষ নষ্টসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মতো এবারো ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।

এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন- মাসুদ আলী খান, এটিএম শামসুজ্জামান, সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান কিসলু, শবনম পারভীন, আব্দুল কাদের, আফজাল শরীফ, সুভাশিষ ভৌমিক, কাজী আসাদ, জিল্লুর রহমান, কামাল বায়েজিদ, বিলু বড়ুয়া, জিনাত সানু স্বাগতা, জামিল হোসেন, নিপু, সজল, তারিক স্বপন, আনোয়ার শাহী, রতন খান, রেহান অবিদ, সাবরিনা নিসা, নজরুল ইসলাম, সাজ্জাদ সাজু, মনজুর আলম, ইমিলাসহ আরো অনেকে। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন।

গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই বান্দরবানের পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে ২৯ নভেম্বর, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads