• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
ভাবনার মহানুভবতা

সংগ‍ৃহীত ছবি

শোবিজ

ভাবনার মহানুভবতা

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২০

আশনা হাবিব ভাবনা। ছোটপর্দার এই ব্যস্ত অভিনেত্রী আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। অনিমেষ আইচের ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে খুব সহজেই চলচ্চিত্রবোদ্ধাদেরও নজর কাড়েন তরুণ এই মডেল অভিনেত্রী। লেখক হিসেবেও পরিচিত তিনি।

এবার ভাবনা তার মহানুভবতার প্রমাণ রাখলেন। রাজধানীর জুরাইনের দারোগাবাড়ি ১ নম্বর সড়কের শেখ শিউলি হাবিবের পরে এবার ভাড়াটিয়াদের বাড়িভাড়া মওকুফ করলেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ও তার পরিবার। চলতি মাসের ভাড়া তাদের কাছ থেকে নেবেন না।

রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় ৬ তলা ভবন রয়েছে ভাবনাদের। ভবনটিতে ছয়টি পরিবার ভাড়া থাকেন। করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা।

ভাবনার বাবা ‘রাত্রির যাত্রী’খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার কারণে বাংলাদেশের সবকিছুই স্থগিত হয়ে গেছে। কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে যেতে পারছেন না, তাই আমি এদেশের একজন ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে আমার বাসার সব ভাড়াটিয়ার মার্চ মাসের ভাড়া মওকুফ করে দিলাম।

শিউলি হাবিব ও ভাবনার বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব দুজনেই আশাবাদী, তাদের দেখাদেখি দেশের সব বাড়িওয়ালার এই দুর্যোগের সময় ভাড়াটিয়াদের পাশে দাঁড়াবেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করে দর্শকদের হূদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ভাবনা। নিয়মিত তাকে টিভি পর্দায় দেখা না গেলেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন আপন কাজে।

অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেলেও ভাবনার লেখালেখির অভ্যাস অনেক আগে থেকে। পরিবার থেকেই পেয়েছেন লেখার অনুপ্রেরণা। কারণ নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব লিখতেন। বাবাকে দেখে তার প্রথম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।

ভাবনা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যাস ছিল। বাবা লেখালেখি করতেন। তা দেখে নিজের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়। স্কুল-কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কবিতা ও গল্প লিখতাম। বিভিন্ন পত্রিকাতেও আমার লেখা ছাপা হয়েছে। এভাবেই লেখালেখি শুরু।’

অন্যদিকে অভিনয়েও সচল রয়েছেন ভাবনা। তবে খুব বেশি কাজ না করে ভালোমানের অল্প কাজকেই প্রাধান্য দেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘সবসময় নিজেকে টিভি পর্দায় না দেখিয়ে বছরে বেছে বেছে অল্প সংখ্যক কাজ করি। লেখালেখিটা যেমন ভালো লাগা থেকে করি তেমনই অভিনয়টাও। তাই হয়তো আমাকে নাটকে কম দেখা যায়। তবে যা করি তা দেখে দর্শকরা পরিতৃপ্ত হন।’

নাটকে চরিত্র নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘যেহেতু টিভি পর্দায় নিজেকে বারবার দেখানোর ইচ্ছে আমার একেবারইে নেই। তাই বেছে বেছে কাজ করি। সংখ্যার চেয়ে মানই আমার কাছে বড় বিষয়। অনেক প্রস্তাব এলেও সব করি না। কাজের ক্ষেত্রে নাটকের স্ক্রিপ্ট ও চরিত্রের গুরুত্ব বিবেচনা করেই কাজ করে থাকি। একই চরিত্রে বার বার অভিনয় না করে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে ভাঙতে চাই।’

আঞ্চলিকতার প্রচুর ব্যবহার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহারের গুরুত্ব কমসহ টিভি নাটকে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। এ নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘আমরা একেক জনের সঙ্গে একেকভাবে কথা বলি। বাসায় যে রকম ভাষায় কথা বলি, অফিসে সে ভাষায় কথা বলি না। বন্ধুর সঙ্গে এক রকম ভাষায় কথা বলি, রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলি আরেকভাবে। ব্যক্তি ও পরিবেশ ভেদে ভাষার ব্যবহার হয়। নাটকের বেলাতেও তা-ই হয়। আমার কাছে এ বিষয়গুলো সমস্যা মনে হয় না।’

টেলিভিশনের জন্য নিয়মিত কাজ করছেন ভাবনা। বিশেষ করে বিশেষ দিবস ও উৎসবের সময়ে খণ্ডনাটক, ধারাবাহিক ও টেলিছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। মনের মতো চিত্রনাট্য পান না বলে অভিনয় করেন না চলচ্চিত্রে। এ প্রসঙ্গে ভাবনা বলেন, ‘গত তিন মাসে তিনটি সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। যেসব ছবি পয়সা খরচ করে হলে গিয়ে নিজেই দেখব না, সেসব ছবিতে কেন অভিনয় করব?’

মনের মতো সিনেমা পান না, আবার নাটকে কাজ করা নিয়েও নানা বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয় তাকে। নাটকপাড়ার অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনা নিয়ে কথা বলেন ভাবনা। তিনি বলেন, ‘আমাকে পরিচালকরা নিতে চায়, কিন্তু প্রযোজকরা চায় না। কোনো কোনো পরিচালক এসে বলে, আপু আপনার জন্য একটা ক্যারেক্টার লিখেছি। পরে দেখা যায় প্রযোজক সেখানে বাগড়া দেন।

অনেকে বলেও বসেন, ‘তুমি তো অনিমেষের সঙ্গে প্রেম করো!’ আমাদের এখানেও কাজ পেতে হলে নারী শিল্পীদের কেবল কাজ জানলেই চলে না, প্রযোজকের সঙ্গে কফি খেতে যেতে হয়, হাহা-হিহি করতে হয়। আমি সেটা পারি না, পারবও না। মানুষ আসলে সিঙ্গেল নায়িকা পছন্দ করে। এখানে ভালো কাজও করতে হবে, সিঙ্গেলও হতে হবে, তেলও দিতে হবে। এত কাহিনির মধ্যেও প্রতিদিন কাজের অফার পাই।’

ভাবনা বলেন, ‘আমার সম্পর্কে একবার অভিযোগ উঠল আমি নাকি বেয়াদব। নাটকের প্রস্তাব দেওয়ায় স্ক্রিপ্ট পাঠাতে বলেছিলাম একজনকে। বলেছিলাম, স্ক্রিপ্ট পছন্দ হলেই কাজ করব। তিনি আমাকে বেয়াদব বানিয়ে দিয়েছেন। একে তো মানসম্মত কাজের অভাব, তার ওপর আবার এই সব যন্ত্রণা।’

ভাবনা আরো বলেন, ‘আমি শুধু টাকা রোজগারের জন্য কাজ করি না। কাজের প্রস্তাব, বিশেষ করে নাটকের, প্রতিদিনই পাই। কিন্তু সব কাজ কি আমার পক্ষে করা সম্ভব? আমি একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অনেকে আমাকে বলে, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকো, তোমার আবার কিসের সংগ্রাম? ইচ্ছে হলে কাজ করো, নয়তো করো না।’

আমি বলি, আমার হয়তো তিন বেলা খাওয়ার জন্য কাজ করতে হয় না। কিন্তু আমার সংগ্রামটা অন্য জায়গায়। আমি শিল্পী হতে চাই। আমি চাই আমাকে যথাযথভাবে কেউ ব্যবহার করুক। আমি সারা জীবন নাচ শিখেছি, কিন্তু আমাকে কোনো বড় অনুষ্ঠানে কেউ নাচ করতে দেখেছেন? নাচের ‘ন’ জানে না, কোনো দিন শেখেনি, বড় বড় অনুষ্ঠানে তাদেরই নাচতে দেখবেন। এই যে একজন আর্টিস্টকে কেউ ঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারছে না, এটা শিল্পীর জন্য একটা যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে। আমার ইন্ডাস্ট্রি আমাকে আলাদা করতে জানে না। অথচ ভারতে আর্টিস্ট হিসেবে অমিতাভ বচ্চন এবং ভিকি কৌশলকে একই রকম সম্মান করা হয়।’

শিগগির নতুন একটি টেলিছবিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন ভাবনা। ‘সম্মান’ নামের ওই টেলিছবিতে ভাবনার বিপরীতে দেখা যাবে শ্যামল মাওলাকে।

যে সময় একটার পর একটা বিচ্ছেদর খবর শোনা যাচ্ছে, সে অস্থির সময়ে নদীর মতো ধীর লয়ে বয়ে যাচ্ছে অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ও নির্মাতা অনিমেষ আইচের প্রণয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads