• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

শোবিজ

বিশ্বনেতাদের প্রতি শাকিরার ক্ষোভ

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের। সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ৯১ হাজারের বেশি মানুষ।

কলম্বিয়ার সংগীতশিল্পী শাকিরা বিশ্বের এমন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে এই সংগীতশিল্পী লিখেছেন, ভাইরাস যতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক ততটাই মন্থর বিশ্বের নেতারা।

করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তারকাদের সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে দেখা যায়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল শাকিরাকেই। সরাসরি শাকিরা বিশ্বের নেতাদের সমালোচনা করলেন।

শাকিরা ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বার্রানকিলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার মা নিদাইয়া দেল কারমেন রিপোল তোর্রাদো এবং লেবানিজ বংশোদ্ভূত বাবা উইলিয়াম মেবারাক শাদিদের একমাত্র সন্তান।

শাকিরার মোট ভাইবোনের সংখ্যা আট, যারা সবাই তার বাবার আগের স্ত্রীর গর্ভজাত। ৫ বছর বয়সে তার বাবা সেখান থেকে কলম্বিয়াতে চলে আসেন।

শাকিরা তার যৌবনকালের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন উত্তর কলম্বিয়ার শহর বার্রানকিলায়। ভালো বুদ্ধিমত্তা ও আইকিউ পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার জন্যও শাকিরা বিশেষভাবে পরিচিত।

মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা তার প্রথম কবিতাটি লেখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘লা রোসা দে ক্রিস্টাল’ অর্থাৎ ‘স্ফটিকের গোলাপ’। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার বাবাকে একটি টাইপরাইটারে গল্প লিখতে দেখে এ ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং বড়দিনের উপহার হিসেবে একটি টাইপরাইটার চান।

সাত বছর বয়সে তিনি একটি টাইপরাইটার পান এবং তখন থেকেই তিনি কবিতা লেখা চালিয়ে যান। তার কবিতাগুলো ক্রমেই গানে রূপ নেয়। শাকিরার দুই বছর বয়সে তার এক বড় সৎভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। এ কারণে তার বাবা নিজের দুঃখ ঢাকতে চার বছর কালো চশমা পরে ছিলেন। এ ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শাকিরা আট বছর বয়সে তার প্রথম গান ‘তুস গ্রাফাস ওসকুরাস’ লিখেন যার অর্থ ‘তোমার কালো চশমা’।

তিনি একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার বাবা ছিলেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তার বয়স যখন ৭ বছর, তখন তার বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। কিছুদিনের জন্য তাকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই দুর্দিনেও তার পরিবার তার খরচ ঠিকই চালিয়ে যেত।

যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন, তখন দেখলেন কিছুই আর আগের মতো নেই! শাকিরার পরিবার গাড়ি, দামি আসবাব সবই হারিয়েছিল। যখন তিনি বাড়িতে পৌঁছলেন তখন দেখলেন, তাদের সবকিছুই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

কারণ, তার বাবার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল। যখন এসব দেখলেন তিনি খুবই হতাশ ও বাবা-মায়ের ওপর বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও তার পিতা-মাতা বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি কতটা ভাগ্যবতী।

তার বাবা-মা তাকে নিয়মিত একটি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যেতেন, যেখানে শিশুরা নোংরা ও খালি পায়ে ঘুরে বেড়াত। এসব শিশুকে দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, কত শিশু তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে না বা বুঝতেই পারে না!

এ সময় তিনি নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘যখন আমি একদিন নামকরা শিল্পী হব, আমিই তাদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করব।’ সে জন্য, তিনি ৮ বছর বয়স থেকেই গান লেখা ও কম্পোজ করা শুরু করেছিলেন। ১০ বছর বয়সে, তিনি স্কুলে গান করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভারী কণ্ঠস্বরের কারণে বাদ পড়েছিলেন।

তাকে এমন সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছিল, যে তার কণ্ঠস্বর ‘ছাগলের’ কণ্ঠস্বরের মতো! সংগীতের রাজ্যে প্রবেশের পর তার ২টি অ্যালবাম খুব বাজেভাবে ফ্লপ হয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে তার তৃতীয় অ্যালবাম ব্যাপক ব্যবসা সফল হয় এবং তিনি একটি চ্যারিটি সংস্থা গঠন করেন।

যা পৃথিবীর নানা প্রান্তে গরিব শিশুদের শিক্ষা ও খাবার সরবরাহে সহায়তা করে। শাকিরার গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, উত্থানপতন জীবনেরই একটা অংশ, আর জীবনের পতন থেকে উত্তরণের কারিগর আপনি নিজেই।

শাকিরা সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থাপনা সাইটে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে কি না, ফেসবুকে ১০০ মিলিয়ন লাইক পেয়েছেন। তিনি ম্যারাকানা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আছেন, এমন একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার একটু আগের মুহূর্ত ছিল সেটা। ছবিটি ৪ দিনের মধ্যেই ৩.৫ মিলিয়ন লাইক পেয়ে যায়, এটাই এই তারকার সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া ছবি হয়ে যায় তখনই।

শাকিরার একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন রয়েছে। নিজের জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘পিয়েস ডেসক্যালজোস’-এর নামে ১৯৯৭ সালে শাকিরা তার ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন নিজ দেশে। সর্বজনীন শিক্ষার প্রচারই এর মূল উদ্দেশ্য। যার অর্থায়নে তিনি মানবসেবার কাজ করে থাকেন।

এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি আটটি বিদ্যালয় গড়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন চ্যারিটেবল কনসার্টে তিনি অংশ নেন, তার বিভিন্ন অ্যালবাম ও গান থেকে অর্জিত কিছু অর্থ তিনি এই ফাউন্ডেশনে দান করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্ত আছেন ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads