• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

শোবিজ

প্রীতিলতায় ‘লীলা নাগ’ হচ্ছেন আফসানা মিমি

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০২০

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা এবং প্রথম বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে দুটি সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, যার একটি নির্মাণ করছেন তরুণ নির্মাতা রাশিদ পলাশ। ‘প্রীতিলতা’ শিরোনামে এ সিনেমাটির শুটিং শুরু হচ্ছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় ‘প্রীতিলতা’ চরিত্রে অভিনয় করছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি।

এবার জানা গেল, সিনেমাটির ‘লীলা নাগ’ চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন অভিনেত্রী ও পরিচালক আফসানা মিমি। ছবিটির পরিচালক রাশিদ পলাশ এ তথ্য  নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, সিনেমারটির ‘লীলা নাগ’ চরিত্রের জন্য আমরা এমন একজনকে খুঁজছিলাম, যার সঙ্গে চরিত্রের শতভাগ যায়। এর পর আমাদের মাথায় মিমি আপার নাম আসে। সম্প্রতি আমরা মিমি আপার সঙ্গে বসেছিলাম। তিনি মৌখিকভাবে সিনেমাটিতে কাজ করার জন্য ডেট দিয়েছেন। এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে আমরা কাগজপত্রের যে অংশটা বাকি আছে, সেটি সেরে ফেলব।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বিপ্লবী জীবনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ঢাকায় শ্রীসংঘের ‘দীপালি সংঘ’ নামে একটি নারী শাখায়। লীলা নাগের (বিষয়ের পর লীলা রায়) নেতৃত্বে এ সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করত। গোপনে তারা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও করত। ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে লীলা রায়ের সঙ্গে প্রীতিলতার পরিচয় হয়েছিল। তাদের অনুপ্রেরণায় দীপালি সংঘে যোগ দিয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।

‘প্রীতিলতা’ সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন গোলাম রাব্বানী। নভেম্বরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কলকাতায় ছবিটির শুটিংয়ের প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে সিনেমাটির।

১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা। তিনি ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে আত্মাহুতি দেন।

আফসানা মিমি একাধারে তিনি একজন পারদর্শী অভিনয়শিল্পী, দক্ষ নির্মাতা ও সংগঠক। বর্তমানে অভিনয়ে নিয়মিত নন তিনি। ক্যামেরার পেছনেই বেশি কাজ করছেন তিনি। কেবল বিশেষ দিবসের নাটক কিংবা বিশেষ কোনো চরিত্র পেলে কালেভদ্রে চলচ্চিত্রেও দেখা মেলে অভিনয়শিল্পীর। তবে গত ১০ বছরে কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি। সম্প্রতি একটি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন।

শোবিজে পথচলার ৩০ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছেন আফসানা মিমি। অভিনয়ে তার অভিষেক হয়েছিল মঞ্চের মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে প্রথম মঞ্চে ওঠেন। অভিনয় করেন মনোজ মিত্রের ‘রাজদর্শন’ নাটকের রানী চরিত্রে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত সৈয়দ মহিদুল ইসলাম। একই নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য গাজী রাকায়েতের মাধ্যমে পরবর্তীকালে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। নাগরিকের হয়ে প্রথম মঞ্চে উঠেছিলেন শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে আলী যাকের রচনা ও নির্দেশনায় ‘দর্পণ’ নাটকের কোরাস দলের একজন হয়ে। পরে অভিনয় করেন ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’, ‘দর্পণে শরৎশশী’, ‘ঈর্ষা’ প্রভৃতি নাটকে।

টিভি পর্দায় আফসানা মিমিকে প্রথম দেখা যায় বিজ্ঞাপনচিত্রে। ‘পেপস জেল’ টুথপেস্টটি এখন বাজারে না দেখা গেলেও নব্বইয়ের দশকে এই একটি বিজ্ঞাপন করেই পেয়ে যান পরিচিতি। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘জিরো পয়েন্ট’ নাটকে ছোট পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন। এ নাটকে তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন আমজাদ হোসেন। তিনি তার ‘বউ কথা কও’ নাটকে আফসানা মিমিকে প্রধান চরিত্রে কাস্ট করেন। এটাকে আফসানা মিমি ছোট পর্দায় তার অভিনয়ের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন। তবে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বড় পর্দায়ও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন আফসানা মিমি। নিজে চলচ্চিত্রে অভিনয় খুব কম করলেও দীর্ঘদিন সিনেমার অনেক তারকা নায়িকার ডাবিং করেছেন। বিশেষ করে নায়িকা পপির কণ্ঠে দীর্ঘদিন দর্শক শুনেছেন মিমির কণ্ঠ, যা অনেকেই হয়তো জানেন না। যেসব তারকা নায়িকা ডাবিং করতে চান না বা পারেন না, সিনেমার পর্দায় তাদের ঠোঁটে আফসানা মিমির কণ্ঠ একসময় নিয়মিত ছিল। তবে এখন আর সিনেমার ডাবিং করেন না। ১৯৯২ সালে আজিজুর রহমানের ‘দিল’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। এর পর অনেকগুলো আলোচিত ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন। তার মধ্যে ‘নদীর নাম মধুমতি’ ও ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘প্রিয়তমেষু’ উল্লেখযোগ্য। কিছুদিন আগে চলচ্চিত্রে ফিরেছেন আফসানা মিমি, চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ-পুণ্য’ চলচ্চিত্রে। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি ২০০০ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘বন্ধন’ দিয়ে পরিচালনায় আসেন। টেরিস্ট্রিয়াল একুশে টিভিতে প্রচারিত ‘বন্ধন’ ধারাবাহিকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি মিডিয়ায় তৈরি করেন দীর্ঘ ধারাবাহিক নির্মাণের ট্রেন্ড। আফসানা মিমি এরপর একে একে নির্মাণ করেন দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘গৃহগল্প’, ‘সাড়ে তিনতলা’, ‘কাছের মানুষ’ ও ‘ডলস হাউস’। তার প্রতিটি ধারাবাহিকই বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

আফসানা মিমি জানান, অভিনয় করার সুযোগ পাই না, তবে অভিনয়কে ভীষণ মিস করি। অভিনয় দিয়েই তো আমি আজকের আফসানা মিমি। তবে পর্দার সামনের চাইতে পর্দার পেছনের দায়িত্ব অনেক। তাই তো আমি পেছনে থেকেই কাজ করছি। আর প্রাণের টানেই মাঝে মাঝে অভিনয় করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads