• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
অভিনেতা ফারুক আহমেদ

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

শোবিজ

‘মঞ্চ হলো অভিনয়ের বিদ্যাপীঠ’

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০২০

জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক আহমেদ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। মঞ্চ, টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন পেশাদার অভিনেতা হিসেবে পদচারণা রয়েছে তার।

ভিন্নধারার অভিনেতা ফারুক আহমেদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। গ্রাম থেকে পরে শহরে পাড়ি জমান। ছোটবেলা থেকেই তার আবৃত্তিতে মনোযোগ ছিল বেশি। গ্রামের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। শহরে এসে শূন্য লাগত ফারুকের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন মীর মশাররফ হোসেন হলের নাট্য সম্পাদক হিসেবে। ফারুকের বাবা সন্তানকে অভিনয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। যখন কোনো পত্রিকায় ফারুকের ছবি বা সংবাদ ছাপা হতো, তখন তা কেটে রেখে দিতেন তিনি। সে সময় চারপাশ থেকে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। কৈশোর-উত্তীর্ণ সে সময়টাই সবচেয়ে কঠিন ছিল ফারুকের জন্য।

ফারুক বলেন, ‘আমি যেন নাটক না করতে পারি সেই চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। কেউ আবার চলার পথেও বাধা হয়েছেন। মনোবল হারাইনি কখনো।’

 ১৯৮৩ সালে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘প্রাচ্য’, ‘চাকা’, ‘বনপাংশুল’ ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেন।

বরেণ্য লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করাই ছিল ফারুকের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সে সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘বারো রকম মানুষ’ নাটকে ‘রসিক লাল’-এ নেতিবাচক চরিত্র ফারুককে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছিল। বিটিভি থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। এর মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়। তিনি বেঁচে থাকাকালে প্রায় সব নাটকেই অভিনয় করেন ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ তার ‘লিলুয়া বাতাস’ বইটি ফারুককে উৎসর্গ করেছিলেন।

এ বিষয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘এটি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করি। এ পাওয়া আমার কাছে বড় পুরস্কারের চেয়েও অনেক কিছু। মানুষ একটা বয়সে অনেক কিছু হতে চায়। আমিও হয়তো চেয়েছিলাম। কিন্তু একটা সময় পর আমি বুঝতে পারি, মঞ্চ আমার নিজের জায়গা, অভিনয়টাই আমার লক্ষ্য। কিন্তু সে সময় অভিনেতা হওয়া সহজ ছিল না। এত চ্যানেল, এত নির্মাতা ছিলেন না। একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া আর কোনো মাধ্যম ছিল না। জীবনের এ পর্যায়ে এসে দেখি, একসময় যারা আমায় নিয়ে নানা কথা বলতেন, এখন তারাই আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। জীবনে যা চেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আমার অভিনয় জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত।’

বর্তমান টিভি নাটকের হালচাল জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ‘এখন চ্যানেল হয়েছে অনেক। প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আগে তো একটা মাত্র চ্যানেল ছিল। এখন সে জায়গায় অনেক চ্যানেল। দিনে দিনে শিল্পীর সংখ্যাও বেড়েছে। নাটক প্রচার হচ্ছে প্রচুর। অভিনয়শিল্পীরা নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারেন। এটা আমার দৃষ্টিতে ইতিবাচকই মনে হয়। আরেকটি ব্যাপার যেটা এখন অনেক ভালো ভালো নির্মাতা তৈরি হয়েছেন। যারা যথেষ্ট মেধাবী ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ভালো জ্ঞান রয়েছে। আর সেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে একটা ভালো প্রোডাকশন বের হয়ে আসছে। এটাও একটা ইতিবাচক দিক। তবে সমস্যা হলো আমাদের বাজেট। যে পরিমাণ অর্থের দরকার সেটা নির্মাতারা পাচ্ছেন না। যে কারণে নানা জটিলতা প্রায়ই দেখা দিচ্ছে। বাজেট সমস্যা কেটে গেলে নাট্যাঙ্গনের অস্থিরতা অচিরেই কেটে যাবে।’

একটা সময় ফারুক আহমেদ তার সমসাময়িকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখনো করছেন। তবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেক তরুণ শিল্পী। নতুন, পুরাতন সংমিশ্রণ এবং এ সময়ের নাটকের কাজ প্রসঙ্গে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনকার শিল্পীদের নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। কারণ তারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। ভালো-খারাপ কাজ তো সবাই কম-বেশি করছেন। তবে একটা ব্যাপার আমার মনে হয়েছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও অনেকে চর্চার জায়গা থেকে সরে আসছেন। পড়াশোনা কিংবা জানার ব্যাপারটির সঙ্গে অভ্যস্ত নন। আর শিল্পের চর্চার জন্য মঞ্চে কাজ করা জরুরি। কারণ মঞ্চ হলো অভিনয়ের বিদ্যাপীঠ।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads