• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
৩৩ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যয় হবে ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা

বন্যা কবলিত একটি গ্রাম

ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য

দুর্যোগ ঝুঁকির ছয় হট স্পট চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন

৩৩ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যয় হবে ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তনে নানা ঝুঁকি রয়েছে এমন ছয়টি হট স্পট চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আর এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, ভাঙন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, পরিবেশের অবনমনসহ ৩৩ চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশকিছু কর্মকৌশলের কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

১০০ বছরের জন্য তৈরি করা সরকারের ডেল্টা প্ল্যানে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া সম্প্রতি উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে খসড়াটি সংশোধন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) আগামী সভায় পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

খসড়া পর্যালোচনা করে জানা যায়, দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা ছয় হট স্পটের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগরাঞ্চল। এসব অঞ্চলে ঝুঁকি মোকাবেলায় কর্মকৌশল বাস্তবায়নে ১৪ বছরে ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের ২৩টি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে ৬ প্রকল্পে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮ প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি, নদী ও মোহনা অঞ্চলে ৭ প্রকল্পে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি ও নগর অঞ্চলের জন্য ১ প্রকল্পে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের খসড়ায় প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পানিবিজ্ঞান ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে দেশের আটটি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকিমাত্রার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন জেলাগুলোকে একেকটি গ্রুপের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা মোকাবেলার উদ্যোগও পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

ডেল্টা প্ল্যানে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদুপানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমনের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের ৫ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্বাদুপানির দুষ্প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন। এ ছাড়া হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী এবং মোহানা অঞ্চল ও নগরাঞ্চলের জন্য ৫টি করে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।

হট স্পটগুলোর এসব চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবিত কৌশলে নদী ও পানিপ্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা, পানিপ্রবাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ও মানসম্মত স্বাদুপানি সরবরাহ করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া নদীগুলোর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যথাযথ পলি ব্যবস্থাপনা করা, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষা এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় জলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে টেকসই জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা ও সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়।

সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানিসম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার কাজ করছে জিইডি। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে চলতি বছর। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮ কোটি টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads