• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
বইছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ

ফাইল ছবি

আবহাওয়া

তাপমাত্রা নামবে ১০ ডিগ্রির নিচে

বইছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি এ মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে দেশের অনেক জায়গাতেই দেখা মেলেনি সূর্যের। পৌষের শুরুতে বয়ে চলা এই শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের ছিন্নমূল ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। শীতে কাবু হয়ে কাজকর্মে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি।

তিনি জানান, বুধবার সকালে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরো দুই-তিন দিন তাপমাত্রা কমা অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসতে পারে। তবে ঢাকায় তাপমাত্রা এই পরিমাণ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। মূলত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকবে। দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে শীত অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। এবং দিনের তাপমাত্রাও সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

গতকাল বুধবার ঢাকায় সূর্যাস্ত ছিল বিকাল ৫ ১৫ মিনিটে। আর আজ ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ছয়টা ৩৬ মিনিটে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। সিলেটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ থেকে নেমে গতকাল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহে ১৪ দশমিক ৬ থেকে কমে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৩ থেকে কমে ১১ দশমিক ৪, খুলনায় ১৭ দশমিক ৪ থেকে কমে ১৫, বরিশালে ১৫ থেকে নেমে গতকাল তাপমাত্রা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত মঙ্গলবারের মতো গতকাল বুধবারও ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরে গতকাল থেকে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। একই সঙ্গে বইছে মৃদু বাতাস। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সূর্যের তেজ ততটা ছিল না। বিকালের দিকে সূর্যের তেজ কিছুটা বাড়ে। তবে গতকাল বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত সূর্য ঊঁকি দেয়নি। দুদিন ধরে তাপমাত্রা কমছে জানিয়ে দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে এ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সেখানে তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারদিক। শীতের সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যবর্তী সাড়ে ৪০০ চরের প্রায় আট লাখ দরিদ্র মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া দপ্তরের পর্যবেক্ষক সুনীল কুমার জানান, গত কয়েক দিন থেকে তাপমাত্রা নিচের দিকে নামছে। আরো নামতে পারে। গতকালের (গত মঙ্গলবার) চেয়ে এখান তাপমাত্রা আরো কমেছে। আজ (গতকাল বুধবার) তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দিন দিন তাপমাত্রা আরো কমতে থাকবে। এ মাসের শেষের দিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য এখন পর্যন্ত জেলায় ৫১ হাজার ৫০০ কম্বল পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তা নয় উপজেলা ও তিন পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। পড়ছে ঘন কুয়াশা। গতকাল বুধবার সকালে দুধকুমার নদের তীরবর্তী সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চর রসুলপুরের কৃষক খলিলুর রহমান, আবদুল কাদের জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর চারদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়। সারা রাত টপটপ করে কুয়াশা বৃষ্টি পড়ে। গ্রামের লোকজন খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছে। কোনো কোনো কৃষক বৈরী অবস্থার মধ্যেও মাঠে কাজ করছেন। গবাদিপশুর গায়ে চট দিয়ে রাখা হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটার বৃদ্ধ হনুফা বেওয়া বলেন, ‘ঠান্ডা সওয়া যায় না গো। হান্ডিত (হাড়) আসি নাগে। হামরা গরিব মানুষ গরম কাপড় নাই। শীত পার করি কেমন করি।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে ২৮ হাজার কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads