• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনায় তেলের বাজার অস্থির

সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব

ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনায় তেলের বাজার অস্থির

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানি সরবরাহে সংকট তৈরির শঙ্কায় এ তেলের দাম গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। খবর বিবিসি ও ব্লুমবার্গ

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চলকে রাশিয়া ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে সেনা পাঠানোর পর গতকাল মঙ্গলবার ফিউচার মার্কেটে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ৯৯.৩৮ মার্কিন ডলারে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।

এরআগে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল, রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে পরিণতি হবে ভয়াবহ। গতকাল রাশিয়ার পদক্ষেপের পর কঠোর অবরোধে আরোপের হুমকি দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। আর সেটাই চড়িয়ে দিচ্ছে তেলের বাজার।

সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। সেইসঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়াতেই উত্তোলন করা হয়। আর ওই গাসের ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল।

এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তেল ও গ্যাস সরবরাহের ওপরও তার প্রভাব পড়বে।

রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দোনেস্ক ও লুহানস্কে তারা সেনা পাঠিয়েছে শান্তি রক্ষার জন্য। তবে ক্রেমলিনের ওই বক্তব্যকে ‘ফালতু কথা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে ওয়াশিংটন বলেছে, এটা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা পরিকল্পনারই অংশ।

ম্যানুলাইফ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের সু ট্রিন বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার এ উত্তেজনার ‘উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ পড়তে পারে বাজারে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া যদি তেল ও গ্যাস সরবরাহ কমাতে বাধ্য হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে তার বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ফাইডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগ পরিচালক মাইক কুরি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এবার শীত থাকায় জ্বালানির চাহিদাও ছিল বেশি। কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে তেল-গাস সরবরাহে সংকট আছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা।

সব মিলিয়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালিন তেলের দাম ১০০ ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৯.৩৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।  অন্যদিকে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯৯.৫৪ ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৪ সালের পর এটিই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সর্বোচ্চ মূল্য।  

রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে বহু বছর ধরে। এসব বিধিনিষেধ রাশিয়ার অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপে রেখেছে। তবে এবার কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে তা স্পষ্ট নয়।

 শেয়ার বাজারে লাল বাতি :  কেবলই করোনভাইরাস মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এর মধ্যে ইউক্রেন সংকট নতুন করে দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে বিনিয়োগকারীদের।

জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক গতকাল আগের দিনের চেয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেছে। আর সাংহাই কম্পোজিট সূচকে পতন হয়েছে ১ শতাংশের মতো।

ফলে ইউরোপ আর আমেরিকার বাজার যখন খুললো, দরপতন যে হবে, সেটা জানাই ছিল।

এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে গেছে। ডাও জোন্সের সূচক কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। নাসডাক ১০০ ফিউচার ২ দশমিক ২ শতাংশ পড়ে গেছে।

সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকিংয়ের অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মনের মধ্যে এখন যুদ্ধের শঙ্কা। বাজারেও সেই অশনি সংকেত বাজছে।

পণ্য পরিবহনের খরচ এখন এমনিতেই বাড়তি। যুদ্ধ লেগে গেলে তা আরো বেড়ে যাবে, যা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত।

মিজুহো ব্যাঙ্কের অর্থনীতি ও নীতি-কৌশল বিভাগের প্রধান বিষ্ণু ভারথান বলেন, রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো সত্যি সত্যি একটি যুদ্ধে গড়াবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আপাতত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েই মাথাব্যথা সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বে যে জ্বালানি তেল প্রতিদিন ব্যবহার হচ্ছে, তার প্রতি ১০টি ব্যারেলের মধ্যে একটি আসছে রাশিয়া থেকে। ফলে আপনি যখন তেলের দামের কথা বলবেন, রাশিয়াকে বিবেচনায় রাখতেই হবে। আর এটা সাধারণ মানুষকে ভোগাবে, কোনো সন্দেহ নেই, এমনটাই বলছেন জ্বালানি তেল বিশেষজ্ঞরা।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads