• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
আলোচনা ও যুদ্ধ চলছে এক সঙ্গে

সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব

আলোচনা ও যুদ্ধ চলছে এক সঙ্গে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০২২

রুশ বাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশের পঞ্চম দিনের মাথায় দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলারুশ সীমান্তবর্তী গোমেল এলাকায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এ শান্তি আলোচনা শুরু হয়। খবর বিবিসির।

এই আলেচনার মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনের শহর খারকিভে রাশিয়ার প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে শতাধিক লোক নিহত এবং তিন শতাধিক লোক আহত হয় বলে জানান দেশটির কর্মতারা।

গতকাল বিকেলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের শহর খারকিভে রাশিয়ার প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে ১০২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩০৪ জন আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা অ্যান্তন হেরাশচেঙ্কো এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, রুশ সৈন্যরা খারকিভের আবাসিক এলাকায় গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বোমাবর্ষণ করেছে। যাতে শতাধিক লোক নিহত এবং শত শত লোক আহত হয়েছেন!

তিনি আরো লেখেন, পুরো বিশ্ব দেখুক এই ভয়াবহতা! দখলদারদের মৃত্যু চাই!

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১০২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং আরো ৩০৪ জন আহত হয়েছেন।

ব্যাচলেট বলেন, এই বেসামরিকদের বেশিরভাগই বিস্ফোরক অস্ত্রের দ্বারা নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ভারী কামান এবং মাল্টি-লঞ্চ রকেট সিস্টেম থেকে গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলাসহ ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমার আশঙ্কা,  প্রকৃত সংখ্যা যথেষ্ট বেশিই হবে।

শান্তি আলোচনায় ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং রুশ সেনা প্রত্যাহার চায়। তবে মস্কো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়, যা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে।

বৈঠকে পুতিনের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে আছেন তার সহকারী ভ্লাদিমির মেডিনেস্কি। তিনি রাশিয়ার প্রতিনিধিদের প্রধান হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।

তবে বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, তিনি এই আলোচনা থেকে কোনো অগ্রগতি আশা করেন না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, খুব ছোট হলেও তাদের এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত যাতে কেউ ইউক্রেনকে যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা না করার জন্য দোষ দিতে না পারে।

আলোচনায় বসলেও ২ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেশটির সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ফেদোরভ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর জন্য সামনের দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে বেলারুশে অনুষ্ঠেয় আলোচনা নিয়ে তিনি আশাবাদী বলেও উল্লেখ করেন।

ফেদোরভ বলেন, শর্ত ছাড়াই আলোচনা হতে হবে। কিয়েভের বন্ধু এবং নেতাদের অবস্থান জানা আছে। তারা বসে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

ইউক্রেনে রাশিয়াকে কল্পনার চেয়েও বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে ফেদোরভ বলেন, ইউক্রেনীয়দের চেনেন, তারা কেউই ফুল নিয়ে রুশ সেনাদের সামনে আসবে না। এটিই বাস্তবতা।

এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জায়ার দুই শহর বারদিয়ানস্ক ও এনারহোডারের দখল নিয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ সেনাবাহিনী। জাপোরিজ্জায়ার একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রও রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করলেও তা ধ্বংস করেনি রুশ বাহিনী। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ আগের মতোই স্বাভাবিক আছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এই তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে।

গতকাল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়া ৫ হাজার ৩০০ সেনা হারিয়েছে। 

দেশটির উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়ারের বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্টে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযান শুরুর দিন থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষতির আনুমানিক হিসাব দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, এ সময়ে রাশিয়ার ২৯টি বিমান, ২৯টি হেলিকপ্টার, ১৯১টি ট্যাংক, ৮১৬টি সাঁজোয়া যান, ৭৪টি বন্দুক, একটি বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ২১টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ২৯১টি যানবাহন, ৬০টি জলকামান, ৩টি ড্রোন ও ২টি জাহাজ-মোটরচালিত নৌকা ধ্বংস করেছে ইউক্রেন।

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার প্রায় ৫ হাজার ৩০০ সেনা নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, তথ্যগুলো আনুমানিক। যুদ্ধের পর ডেটা সংগ্রহ অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কারণ কমান্ডারদের প্রধান নজর থাকে যুদ্ধে।

গতকাল রুশ সৈন্যরা কিয়েভ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নেয়া সত্ত্বেও রাজধানী শহর এখনো ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে এবং শহরে জারি করা দুই দিনের কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। উত্তর-পূর্বের চেরনিহিভ শহরে রাতভর রাশিয়ার সেনারা ভারী গোলাবর্ষণ করেছে। কিন্তু এটিও এখনো ইউক্রেনের হাতে রয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে, ইউক্রেনে আক্রমণের সময় তাদের বাহিনী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যদিও কয়েকদিন ধরে তারা দাবি করেছে যে, তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

রাশিয়ার সেনাদের রোববার খারকিভ শহর থেকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সেনারা। কিয়েভের এমন দাবির মুখে দেশটির বিরুদ্ধে এবার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এমন হামলার হুমকি কার্যত কখনই বাস্তবায়ন হবে না।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ইউক্রেনের ওপর রুশ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ।

দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এ অভিযানের চতুর্থ দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় তুমূল লড়াই চলেছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads