• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

বিদেশ

বাণিজ্য যুদ্ধে জয়ী অস্ট্রেলিয়া!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে শুরু হয়েছে ওয়াশিংটন বনাম বেইজিং বাণিজ্য যুদ্ধ। দুই দেশই একে অপরের ইটকেলের জবাবে পাটকেল ছুড়ছে। সপ্তাহখানেক আগেও অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এবারের বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো পক্ষই সম্ভবত জিতবে না। কিন্তু একাধিক অর্থনীতি বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে মিডিয়া এনপিআর বলছে এবারের বাণিজ্য যুদ্ধে খুব সম্ভবত জিতবে অস্ট্রেলিয়া।

উদাহরণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা ১৯৯০ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। সে সময় এশিয়ার অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মাঝেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেশটি। তখন যুক্তরাষ্ট্র ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ট্রেড ডিল থেকে বের হয়ে গেলেও এখনো সেই চুক্তিতে আছে অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, ক্যানবেরা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় একাধিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এমনকি চীনের সঙ্গেও ফ্রি ট্রেড ডিল করেছে দেশটি। চীন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। দেশটি এমন অনেক দ্রব্যই উৎপাদন করে যা চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করে। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া শুধু চীনেই ২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের ওয়াইন রফতানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির প্রায় দ্বিগুণ। এরপরই ফল এবং বাদাম রফতানিতে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির মোট উৎপাদিত ফলের ৪০ শতাংশই চীন এবং হংকংয়ে রফতানি করা হয়। অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিকসের মতে, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া একাই সর্বাধিক পরিমাণ কয়লা রফতানি করেছে। এমন অবস্থায় চীন এবং অস্ট্রেলিয়া উভয়ই রফতানিতে শীর্ষে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের ক্ষতি হলে এগিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজ দেশে শ্রমবাজার বাড়াতে চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। চীনের কারণে আমেরিকার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ট্রাম্প এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি অভিযোগ করে বলেন, চীনের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির কারণে আমেরিকার শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লক্ষাধিক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ফলে চীন হতে আমদানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ট্রাম্পকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের জবাবে  সোমবার চীনও যুক্তরাষ্ট্রের মদ, শুয়োরের মাংস, ফলসহ মোট ৩০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বসিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দুই ক্ষমতাধর দেশের মধ্যকার লড়াইয়ের প্রভাব ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। তবে এতে ভ্রূক্ষেপ নেই ট্রাম্প কিংবা জিনপিংয়ের। উল্টো ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধকে ভালো এবং এই যুদ্ধে আমেরিকার কোনো ক্ষতি নেই বলেও বারবার বলছেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলেই আমেরিকার স্টিল শিল্পে চাকরির সুযোগ নাও বাড়তে পারে। উল্টো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইস্পাত আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক বসালে মাত্র ৩৫০০ মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। কিন্তু এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে। কারণ ইস্পাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। আর পণ্যের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফার হিসেবে কর্মী ছাঁটাই করতে পারে। সেক্ষেত্রে ৩৫০০ নতুন কর্মক্ষেত্রের বিপরীতে নতুন করে কয়েক হাজার মানুষ চাকরি হারাতে পারে। শুধু তাই নয়, আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইউরোপ এবং কানাডা অতিরিক্ত শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেতে চাইবে যা ওয়াশিংটন প্রশাসনের জন্য সুখকর হবে না।

এই বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের ক্ষতি কতটা তা নির্ভর করছে চীনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির ওপর। এখন পর্যন্ত যেহেতু চীনের বাণিজ্যিক মিত্র দেশগুলো চীনা আমদানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করেনি তাই আপাতত চীনের বাজার হারানোর ভয় কিছুটা কম। চীন যদি মদ এবং শুয়োরের মাংসের মতো যুক্তরাষ্ট্র হতে আমদানিকৃত কৃষি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে শুরু করে তাহলে আমেরিকার কৃষি বাজারে মন্দাবস্থা শুরু হতে পারে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads