• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

ট্রাম্পের উদ্দেশে গুতেরেস 

পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হবেন না

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৮

ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের না হতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ২০১৫ সালে হওয়া ওই চুক্তি না মানা হলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। খবর বিবিসি ও সিএনএন।

গুতেরেস বলেন, ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির ওই চুক্তি ছিল গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়। এটি বহাল রাখা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভালো কোনো বিকল্প না পাচ্ছি ততক্ষণ এটি বাতিল করা উচিত হবে না। তা না হলে আমরা বিপজ্জনক সময়ের মুখোমুখি হব। চুক্তির আড়ালে ইরান এখনো পারমাণবিক কর্মসূচির জ্ঞান অর্জন করে যাচ্ছে বলেও ইসরাইলের দাবির কয়েকদিনের মধ্যেই গুতেরেস চুক্তির পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করলেন।

ইসরাইলের অভিযোগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, তেল আবিবের উন্মোচিত নথিতে প্রমাণ হয়ে গেছে ওবামা আমলে হওয়া চুক্তি মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের তিন ইউরোপীয় মিত্র ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি বর্তমান চুক্তিতেই অটল থাকার পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ওই জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশানের (জেসিপিওএ) আওতায় তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহূত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ ছাড়া মজুত থাকা ইউরেনিয়ামের পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রায় নামিয়ে আনার শর্তে রাজি হয়েছিল দেশটি। চুক্তির পর পরই ইরান তাদের নাতাঞ্জ ও ফোরদো কেন্দ্রে স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনে এবং স্বল্প-সমৃদ্ধ টন টন ইউরেনিয়াম রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া চুক্তির শর্ত কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা জানতে নিয়মিত বিরতিতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিনিধিদলও তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে আসছে।

তিন বছর আগে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি ও রাশিয়ার সঙ্গে ওই চুক্তি করেছিল তেহরান। তবে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বারাক ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত ওই সমঝোতা চুক্তির কঠোর বিরোধিতা করে আসছেন। দেশটি শেষ পর্যন্ত চুক্তিতে থাকবে কি না- ১২ মে’র মধ্যে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ট্রাম্পের অভিযোগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় যে শত কোটি ডলারের অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে ইরান, তা দিয়ে দেশটি অস্ত্র ক্রয়, সন্ত্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আগ্রাসনের সুযোগ তৈরি করছে। সেই কারণেই বর্তমান চুক্তি থেকে বেরিয়ে প্রয়োজনে নতুন আরেকটি চুক্তির পথে হাঁটার ব্যাপারে বার বার আগ্রহ প্রকাশ করছেন ট্রাম্প। তবে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছে ইরান।

দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, চুক্তি নিয়ে নতুন করে মধ্যস্থতার অধিকার নেই ট্রাম্পের। ইরান শুরু থেকেই তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে। তেহরানের দাবি, জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতেই তাদের এ পরমাণু কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র যদি বেরিয়ে যায় তাহলে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে হওয়া চুক্তির কার্যকারিতা থাকবে না বলে আগেই সতর্ক করে তেহরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছিলেন, প্রয়োজনে তার দেশ নতুন উদ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করবে।

এদিকে ব্রিটেনে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হামিদ বায়েদিনেজাদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে তেহরানও একই কাজ করবে। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো এর অস্তিত্ব আর থাকবে না। কারণ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্ষ তা থেকে ক্ষমতার বলে বের হয়ে যাচ্ছে এবং চুক্তির শর্ত সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করছে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হবে এবং আরো কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে ইরান যাই করুক না কেন, পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads