• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
 ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরমাণু চুক্তির লঙ্ঘন : ফ্রান্স

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ

ইন্টারনেট

বিদেশ

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরমাণু চুক্তির লঙ্ঘন : ফ্রান্স

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ জুন ২০১৮

ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে মিত্রদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, ইরান যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করে তাহলে তাদের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এদিকে, তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ঘোষণাকে দেশটির সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে ফ্রান্স। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, ইরানের এ সিদ্ধান্ত পরমাণু চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ঘোষণার পর ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিবিসি ও পার্স টুডে।

অন্যদিকে তেহরান হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইরানি জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরালো করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ইরানি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বোরুজেরদি এই হুশিয়ারি দেন। পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর সেটি ভেঙে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এ লক্ষ্যে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর সমর্থন আদায়ে জার্মানির পর ফ্রান্সে গেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে সম্প্রতি আমরা যেসব নথিপত্র প্রকাশ করেছি তাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়, তারা বিশ্বকে ধোঁকা দিচ্ছে। আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাব না। অর্থনৈতিক বাস্তবতাই নির্ধারণ করবে এ চুক্তির ভবিষ্যৎ। এতদিন চুক্তির পক্ষে থাকলেও এদিন ম্যাখোঁ বলেন, চুক্তি থেকে কোনো পক্ষ সরে গেলে, তা বাকিদেরও চুক্তি রক্ষায় অনুৎসাহিত করে।

তিনি আরো বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ঘোষণা পরমাণু চুক্তি থেকে ইরানের সরে যাওয়ার একটি পাঁয়তারা। এটি চুক্তির লঙ্ঘন। বর্তমানে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি আছে তা যথেষ্ট নয়। যদিও তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সবাই যেন বিরত থাকে। ইতোমধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে জানিয়েছে ইরান।

দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুখপাত্র বলেন, চুক্তি রক্ষায় ইউরোপের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। তাই আমরা বসে থেকে সময় নষ্ট করব না। এসবের মধ্যেই সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা, অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড এবং অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুরনো অভিযোগ তুলে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে মিত্রদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরালো করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।

আলাউদ্দিন বোরুজেরদি বলেন, ঐক্য ও সংহতিই ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল করেছিল। এরপর গত চার দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার সবগুলো একই উপায়ে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প সরকার নতুন করে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপের ষড়যন্ত্র আঁটছে সেগুলোও ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতার দেওয়া শর্তের ভিত্তিতেই এ আলোচনা হতে হবে।

ইউরোপীয় দেশগুলো চায় চুক্তি বহাল রেখে ইরানকে নিষেধাজ্ঞা-বহির্ভূত বাস্তবতায় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে। তবে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর একটা বড় অংশের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত হওয়ায় বাণিজ্যের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে ৬ জাতিগোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র (পি-ফাইভ) যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি (ওয়ান) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল আখ্যা দিয়ে গত ৮ মে তা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads