• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
লাওসে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ড্যামে ধস, নিখোঁজ শতাধিক 

লাওসের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ড্যাম ধসে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে

ছবি: লাওসে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম

বিদেশ

বিশ্লেষণ

লাওসে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ড্যামে ধস, নিখোঁজ শতাধিক 

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৮

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস।  পর্বতময় দেশটির আয়তন মাত্র ২৩৬ বর্গকিলোমিটার।  তবে আকাঙ্ক্ষায় অনেক বড় দেশটি স্বপ্ন দেখে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে পরিণত হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যটারিতে।  সেই লক্ষ্যেই লাখো মানুষের বিরোধিতার পরও ২০১৩ সালে দেশটির সরকার বৃহত্তম জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। 

মঙ্গলবার দেশটির সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি ড্যাম ধসে গেছে।  এতে দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাটারি হওয়ার স্বপ্ন যেমন ভেসে গেছে, তেমনি ভেসেছে লাখো মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি।  নিশ্চিতভাবে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় শতাধিক।  

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে মেকং নদীর ওপর নির্মিতব্য ড্যামটি ধসে পড়ে এবং ছয়টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ । নিখোঁজ রয়েছে প্রায় শতাধিক মানুষ। কেউ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, আবার কেউ ঠাঁই নিয়েছেন গাছের ডালে। নিখোঁজ ও আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে অভিযান শুরু হয়েছে, যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীও।

জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটির আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কোম্পানি জে-পিয়ান জে-ন্যামনয় পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড সরাসরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তাদের থাই অংশিদার প্রতিষ্ঠান রাচতাবুড়ি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটিং হোল্ডিং। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ড্যামের ৭৭০ মিটার এলাকা পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণেই পানির চাপ বেড়ে এমন ঘটেছে।

এদিকে ধসের খবর প্রকাশ করার পরপরই ওই ধসে যাওয়া ড্যাম নিয়ে আরেকটি বিশ্লেষণমূলক খবর প্রকাশ করে বিবিসি অনলাইন।  ‘লাওসের জলবিদ্যুতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনিশ্চয়তায়’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্যাম ধসের ঘটনা আসলে লাওসের বিদ্যুৎ উৎপাদনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সবার সামনে উন্মোচন করেছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাওসের রফতানি আয়ের ৩০ শতাংশই আসে বিদ্যুৎ খাত থেকে।  সরকারের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ করা।  ২০১৭ সালের এক হিসাবে দেশটিতে উৎপাদনে ছিল মোট ৪৬টি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র; আর ৫৪টির নির্মাণ কাজ চলছিল। 

দেশটির লক্ষ্য ২০২০ সাল নাগাদ মোট ১০০টি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রকে উৎপাদনে নিয়ে যাওয়া এবং বার্ষিক ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা। লাওসের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশটি বছরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার দুই তৃতীয়াংশই রফতানি করে। ১৯৯৩ সালের এক চুক্তির আওতায় কেবল থাইল্যান্ডই দেশটি থেকে বছরে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। তবে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দেশটি নির্বিচারে নদীগুলোতে যেভাবে ড্যাম নিমার্ণ করছে তার সমালোচনা রয়েছে দেশের ভেতর-বাইরে। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নাম থিয়েন-২ ড্যাম নিমার্ণের সময় দেশটির পরিবেশবাদীরা এর বিরোধিতা করেন।  যেসব নদীর সঙ্গে চীন বা ভিয়েতনামের সম্পর্ক রয়েছে ওই সময় তারাও এর বিরোধিতা করে।  

পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে ২০১২ সালে মেকারং নদীর জাওয়্যাইবুড়ি ড্যামের কাজ বন্ধ করে দেয় সরকার।  কারণ ওই ড্যাম লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলতো।  

ইকোনোমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে মেকং নদীর অববাহিকার দেশ কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতমানে বিশ্বের ধানের ১৫ শতাংশ চাহিদা মিটিয়েছে।  এছাড়া ওই অঞ্চলের নদী ও বনাঞ্চলে রয়েছে হাজারো প্রজাতির জীব।  মেকং নদী কমিশন বলেছে, লাওস সরকারের বিদ্যুতের উচ্চাকাঙ্খা ওই এলাকার জীবন ও প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বহু বিপন্নতার সতর্কতা মুখেও জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ড্যাম নির্মাণ বন্ধ করেনি লাওস।  এ কারণেই মঙ্গলবারের মতো ঘটনা ঘটছে। ধ্বংস হয়েছে লাখো হেক্টর জমির ফসল, খামার। ভেসে গেছে মানুষ, গবাদি পশু। ২৪ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি শতাধিক মানুষের। মিলবে না হয়তো মরদেহও। মানুষের আহাজারি ও পরিবেশবাদীদের দাবি হয়তো কর্ণগোচর হবে না উচ্চাকাঙ্ক্ষী লাওস সরকারের।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads