নিখোঁজ সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি শেষ কলামেও আরব বিশ্বে অবাধ মতপ্রকাশের সুযোগ চেয়েছিলেন। তার সর্বশেষ কলামটি লেখা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য। বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট নিখোঁজ হওয়ার আগে তাদের কাছে পাঠানো কলামটি ছাপায়। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগেই ৭০০ শব্দের ওই নিবন্ধটি সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন আল-আরব নিউজ চ্যানেলের সাবেক এ প্রধান সম্পাদক। খাশোগির নিখোঁজ নিয়ে আঙ্কারা ও রিয়াদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই ৩ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্ট কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায় কলামটি। দুই সপ্তাহ অপেক্ষার পর সেটি ছাপানো হয়। এ কলামে আরব বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ উন্মোচনের জোর দাবি জানানো হয়। এতে তিনি বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চাওয়া অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোই মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের ‘লোহার পর্দা’ চাপিয়ে দিয়েছে। কলামটির শিরোনাম ছিল ‘আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যা দরকার, তা হলো অবাধ মতপ্রকাশ।’ তিনি লিখেছেন, আমি সম্প্রতি অনলাইনে ২০১৮ সালের ফ্রিডম হাউজের প্রকাশিত ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রতিবেদনটি খুঁজছিলাম। এর ফলে আমার মধ্যে গভীর উপলব্ধি এসেছে। আরব বিশ্বের মধ্যে একটি মাত্র দেশ আছে যাকে স্বাধীন বলা যায়। সেটি হচ্ছে তিউনিসিয়া। এর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জর্দান, মরক্কো এবং কুয়েত। তবে তারা আংশিকভাবে স্বাধীন। বাকি আরব দেশগুলো স্বাধীন নয় বলেই বিবেচিত।
এসব দেশে যারা বসবাস করছেন হয় তারা অজ্ঞ অথবা তাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়। তারা অনেক বিষয় নিয়েই প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারেন না। যেসব জিনিস দেশকে প্রভাবিত করছে বা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন নিয়েও মুখ খুলতে পারেন না তারা। কারণ রাষ্ট্র পরিচালিত মাধ্যমগুলো জনগণের মানসিকতাকে গুরুত্ব দেয় না। যদিও অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন না। একটি বৃহদায়তনের লোকজন অনেক সময়েই মিথ্যা তথ্যের শিকার হন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি, অবস্থার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
২০১১ সালের আরব বসন্তের সুবাদে অনেকের মধ্যেই আশা দেখা দিয়েছিল। সাংবাদিক, বিভিন্ন একাডেমির লোকজন এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল যে, উজ্জ্বল এবং স্বাধীন আরব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। সরকারের কর্তৃত্ব, অবিচল হস্তক্ষেপ এবং তথ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর থাকবে না। কিন্তু তাদের এই প্রত্যাশা বিফলে যেতে সময় লাগেনি। আরব সমাজ সেই পুরনো ধারায় ফিরে গেল। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি আগের চেয়ে কঠোর হতে শুরু করল। সোভিয়েত আমলে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপিত ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপের’ মতো কিছু করা যায় কি না, তারও প্রস্তাব করেন একসময়ে সৌদি রাজপরিবারের উপদেষ্টা ও অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা খাশোগি। ইয়েমেন যুদ্ধ, নারী আন্দোলনকর্মীদের আটক এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিষয়ে রিয়াদের অবস্থান মেনে নিতে না পেরে সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।