• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
মুসলিম নিপীড়ন নিয়ে ভারতকে সতর্ক করল জাতিসংঘ

মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে ভারতকে সতর্ক করল জাতিসংঘ

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

স্যাটেলাইট ছবিতে অক্ষত জইশের মাদরাসা

মুসলিম নিপীড়ন নিয়ে ভারতকে সতর্ক করল জাতিসংঘ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ মার্চ ২০১৯

কাশ্মির ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা কমে এলেও থেমে নেই গুলি বিনিময়। এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে যাচ্ছেই। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের সীমান্তবর্তী শহর রাজৌরির নওশেরা ও সুন্দরবানী এলাকায় ভারী গোলা ও বোমাবর্ষণ চালায় বলে অভিযোগ করেছে ভারত। এর পাল্টা জবাবও দেয় বলে জানায় ভারতীয় সেনারা। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় বাহিনী হামলা চালালে তারা পাল্টা জবাব দেয়। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ডনের।

দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সীমান্তের ৫ কিলোমিটার এলাকায় থাকা স্কুলগুলো তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে ভারতের ‘বিভাজনের নীতি’ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল বুধবার সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল বেচলেট উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতকে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, ভারত সরকারের ‘বিভাজনের নীতির’ কারণে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডা ইতোমধ্যে ভারতের প্রান্তিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য অসমতার সমাজ তৈরি করেছে। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বার্ষিক এক প্রতিবেদনে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বেচলেট বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ভারতে সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত এবং টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম এবং অনগ্রসর দলিত এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা।

শুধু জাতিসংঘ নয়, খোদ ভারতেই নরেন্দ্র মোদি সরকার বার বার সংখ্যালঘু ও প্রতিবেশী পাকিস্তানে বিমান হামলা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর মোদি সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ শুরু করেন বিরোধী নেতারা। গত কিছুদিন ধরে নানাভাবে বার বার মোদিকে আক্রমণ করে যাওয়া দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার বলেছেন, ‘উনি (মোদি) প্রধানমন্ত্রী পদের লজ্জা।’

পুলওয়ামায় হামলার জেরে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা সম্পর্কে কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। গত মঙ্গলবার মমতা আরো একধাপ এগিয়ে বলেন, দেশের মানুষ প্রকৃত সত্য এবং তথ্য জানতে পারছে না। এটা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে উপযুক্ত নয়। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার কথা বলার অধিকার আছে। এর জন্য যা ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারেন, আমার কিছু আসে-যায় না। আমরা দেশের বাহিনী ও মানুষ শান্তির পক্ষে। শুধু মমতাই নন, বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায় ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ দেখতে চেয়েছে গত মাসে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত সামরিক বাহিনীর দুই সৈনিকের পরিবার।

ওই হামলায় নিহত সেনার মধ্যে উত্তর প্রদেশের শামলির প্রদীপ কুমার ও মাইনপুরির রাম ভাকিলের নামও আছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনী বালাকোটের কাছে জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা হামলা চালানোর দাবি করে। প্রায় পাঁচ দশকের মধ্যে এটাই পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে ভারতের প্রথম বিমান হামলা। বিমানবাহিনী জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রায় ৩০০ জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে আসছে নয়াদিল্লি। যদিও শুরু থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের তোলা উপগ্রহের ছবিতে দেখা যায় বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের পরিচালিত মাদরাসাটি এখনো অক্ষত আছে। সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাব নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই উত্তর প্রদেশের দুই সেনার পরিবার বালাকোটে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ‘অকাট্য প্রমাণ’ চেয়েছে।

জইশের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে বলে দাবি করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক বেসরকারি স্যাটেলাইট অপারেটর প্লানেট ল্যাব ইনকরপোরেটেডের সরবরাহ করা ছবিগুলোতে ভারতের বোমা হামলার ছয় দিন পর ৪ মার্চ ওই মাদরাসার স্থানটিতে ছয়টি ভবন অক্ষত দেখা গেছে। যদিও ওই হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্লানেট ল্যাবের ওই ছবিগুলোতে ভারত সরকার যেখানে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে সেখানে পরিষ্কারভাবে ওই কাঠামোগুলো দৃশ্যমান।  এই ছবিগুলোর সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে তোলা স্যাটেলাইট ছবিগুলোর তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

ভবনগুলোর ছাদে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো কোনো ছিদ্র এবং দাহ্য পদার্থের আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। বিস্ফোরণের ধাক্কায় উড়ে যাওয়া কোনো দেয়াল নেই বা মাদরাসার আশপাশে উপড়ে পড়া কোনো গাছ নেই। এমনকি সেখানে বিমান হামলার অন্য কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। এই ছবিগুলো মোদি সরকারের দাবির বিষয়ে আরো সন্দেহ তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads