• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দুশ্চিন্তা দুই লাখ প্রবাসীর

ফাইল ছবি

প্রবাস

#নিয়োগকর্তারা যোগাযোগ করছেন না #শ্রমবাজার খোলার সুখবর নেই

দুশ্চিন্তা দুই লাখ প্রবাসীর

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০২১

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ছুটিতে দেশে আসা দুই লাখ প্রবাসী চরম অর্থ সংকট ও অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জমানো টাকা শেষ, ধার-দেনা করে চলছেন অনেকে। তাই প্রতি মুহূর্ত কাটছে দুশ্চিন্তায়, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন। অনেকের চিন্তা বিদেশে ফেলে আসা কাজে আর ফিরতে পারবেন কি না। পাশাপাশি করোনাকালে এখনো বিদেশে থাকা প্রায় এক কোটি প্রবাসী রয়েছেন জীবিকা ও জীবনের নানা সংকটে। কারণ গত এক বছর ধরে তাদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন বা ব্যবসায় লোকমান গুনছেন। নিয়োগকর্তারাও সুস্পষ্ট করে বলছেন না, কবে তারা কোম্পানি চালু করবেন।

বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব নিয়ে এক জরিপে জানা যায়, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময় ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই দেশে কোনো আয়ের উৎস নেই। ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ৯১ শতাংশ বলেছেন, মহামারীর সময় তারা সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি।

এদিকে করোনায় বিশ্বজুড়ে লকডাউন এবং কর্মস্থলে স্থবিরতার কারণে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন শ্রমবাজার তো দূরের কথা, বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলোও এক বছর ধরে বন্ধ। কবে এসব শ্রমবাজার খুলবে তারও কোনো খবর নেই। এছাড়া বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা একদিকে বেতন পাচ্ছেন না, আবার অনেকে ছাঁটাই ও মজুরি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন দুই লাখ প্রবাসী। আরো কয়েক লাখ প্রবাসীর দেশে ফেরার আশঙ্কা রয়েছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, কোম্পানি বন্ধ থাকায় সৌদি থেকে কয়েক লাখ কর্মীকে দেশে ফিরতে হতে পারে। একই সাথে কয়েকটি দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য এমনটি জানান দিচ্ছে। লেবানন থেকে দেশে ফেরার জন্য হাজার হাজার প্রবাসী বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই প্রায় একই চিত্র। তা ছাড়া বেকার হয়ে পড়ায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকেই এখন বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। চাকরি না থাকায় অধিকাংশই দেশে ফেরার সময় গুনছেন। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ কোথাও প্রবাসীদের জন্য সুসংবাদ মিলছে না। প্রবাস থেকে স্বজনদের কাছে প্রতিনিয়ত আসছে হতাশার খবর।

প্রবাসীদের এমন পরিস্থিতিতে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার আয়োজনে ‘মালয়েশিয়ায় নতুন করে বৈধতা ও ছুটিতে থাকা প্রবাসীদের বাস্তবতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা। পাশাপাশি আলোচকদের দাবি, যারা ছুটিতে রয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে অনেকেই কর্মস্থলে ফিরবেন। সে সময় সরকারি খরচে যেন তাদের পাঠানো হয়। এছাড়া অভিবাসীদের দালালদের প্রতারণা থেকে সুরক্ষায় নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এবং বৈধ কোম্পানিতে শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রত্যেক অভিবাসী শ্রমিক বিদেশের মাটিতে প্রতিশ্রুত চাকরি বেতন এবং আবাসন ও বীমা সুবিধা পায়। নিয়োগকারী কোম্পানি কোনো অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় প্রতিকারের বিধান করতে হবে।

আলোচকরা বলেন, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার যে সুযোগ দিয়েছে, সে প্রক্রিয়া খুবই সহজ। সরাসরি ইমিগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে এবারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর আগের বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় তিনটি ভেন্ডরকে দায়িত্ব দেওয়ায় বিদেশি কর্মীরা প্রতারিত হয়েছে। এবার কোনো ভেন্ডর না থাকায় প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি কোনো সন্দেহ বা সমস্যা হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নিতে প্রবাসীদের আহ্বান জানানো হয়।

মালয়েশিয়ায় গত বছরের মার্চ মাস থেকেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় দেশটির সরকার। এ কারণে অনেকেই ছুটিতে দেশ এসে আর ফিরতে পারেননি কর্মস্থলে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা আবার দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দুদেশের সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি গোটা বিশ্বকে এক বিশাল অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে যা আগামী দিনগুলোতে আমাদের সকলের জন্য হতে চলেছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কার ধকল কাটিয়ে বিশ্ব একটু স্বস্তির দিকে যখন যাচ্ছিল, তখন আবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সফল হওয়া দেশগুলোও এখনো অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads