• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

বিদেশ

খাবার ও পানির জন্য গাজাবাসীর আকুতি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০২১

‘আমাদের খাবার, পোশাক, লেপকাঁথা ও দুধ প্রয়োজন। কিছুই নেই আমাদের।’ দুই সপ্তাহ আগে মা হওয়া গাজার সুহের আল-আরবিদ নামের এক নারীর এই আর্তিই যেন বলে দিচ্ছে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি। ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় গাজায় ধ্বংসস্তূপের শহরে পরিণত হয়েছে। আল-আরবিদের মতো অনেকেই খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে ভুগছে। সেখানে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে গাজায় অভ্যন্তরীণভাবে ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদেরই একজন সুহের আল-আরবিদ। গাজার একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে নবজাতকসহ তাঁর ছয় সন্তান।

মঙ্গলবার মুঠোফোনে আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন আল-আরবিদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খালি মেঝেতে ঘুমানোর কারণে আমার পিঠে ব্যথা হয়েছে। আমার ছেলের জন্য অন্যদের কাছে ডায়াপার চেয়েছি। আমি আমার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছি। কিন্তু এরপরও সে ক্ষুধার্ত থাকে। ফলে সে ক্ষুধায় কান্না করে।’

সুহের আল-আরবিদের মতো গাজার উত্তর ও পূর্বে বসবাস করা শত শত পরিবার গত বৃহস্পতিবার বাড়িঘর ছেড়ে গাজার আল-জাজিদা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। রাতে খালি পায়ে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে তারা সেখানে পৌঁছায়। ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (ইউএনআরডব্লিউএ) ওই স্কুল পরিচালনা করে। ইসরায়েলের বিমান হামলা ও কামানোর গোলায় অনেকের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া এলাকার বাসিন্দা আল-আরবিদ আরও বলেন, ‘আমরা যখন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসি, তখন কোনো গাড়ি বা পরিবহনের সুবিধা ছিল না সেখানে। পুরো রাস্তা হেঁটে আসতে হয়েছে।’

বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা উম্মে জামাল আল-আত্তার ও তাঁর পরিবারের জন্য প্রথম নয়। এর আগেও ইসরায়েলি আগ্রাসনে বাড়িঘর হারায় পরিবারটি। উম্মে জামাল আল-জাজিরাকে বলেন, ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের সময় টানা ৬০ দিন একটি স্কুলে কাটাতে হয়েছিল।

৫০ দিনের ওই যুদ্ধে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যার মধ্যে দেড় হাজারের মতো বেসামরিক নাগরিক।

ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিবেশী একটি বাড়িতে আঘাত হানার পর উম্মে জামাল, তাঁর স্বামী ও পাঁচ সন্তান বাড়িঘর ছেড়ে স্কুলটিতে আশ্রয় নেন। ওই হামলায় তাঁদের প্রতিবেশী লামিয়া আল-আত্তার ও তাঁর তিন সন্তান নিহত হন। তাঁদের বাড়ি বেইত লাহিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আতত্রায়।

উম্মে জামাল বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করে। তারা বিশেষ ধরনের গ্যাসও নিক্ষেপ করে। হামলার ভয়ে পোশাক ও খাবার আনতে বাড়িতে ফিরেও যেতে পারছি না।’ আল-জাজিরাকে তিনি আরও বলেন, বোমাবর্ষণের দুঃস্মৃতি ভোলাতে শিশুদের খেলনা ও অন্যান্য জিনিসপত্র প্রয়োজন।’

ইসরায়েলি হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশ হামলা বন্ধ করে শান্তির পথে ফিরতে দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু এরপরও সংঘাত থামার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। ইসরায়েলি হামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জন শিশু ও ৩৫ জন নারী। আহত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০-এর বেশি। আর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাসের রকেট হামলায় দুই শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন ইসরায়েলি।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র আদনান আবু হাসান। মঙ্গলবার তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত লোকদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য দেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা। অবিলম্বে আরও সহায়তা দরকার। তিনি বলেছেন, গত ১০ মে ইসরায়েল সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় মানবিক ত্রাণসহায়তার গাড়ি গাজায় আসতে পারছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads