• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

গাজায় নিরীহ প্রাণহানি মানব না : রাশিয়া 

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ মে ২০২১

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এতে মারা যাচ্ছে বেসামিরক মানুষ। এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে রাশিয়া। এই ইস্যুতে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হুশিয়ারি দিয়েছে মস্কো। স্থানীয় সময় গত বুধবার রাশিয়ায় নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দার বেন বির সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানোভ। এ সময় রুশ নেতা বলেন, গাজায় আর কোনো নিরীহ মানুষের প্রাণহানি মেনে নেওয়া যায় না। খবর বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা ও ব্লুমবার্গের।

বৈঠক শেষে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব মেটাতে সরাসরি আলোচনা আয়োজনের বিষয়ে রাশিয়ার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বোগদানোভ। বলেছেন, নিজেদের বক্তব্যের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে- যাতে নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধি না পায়।

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে রাশিয়া। সেখানে সাম্প্রতিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে মস্কো। আমরা সহিংসতায় সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানাই। উভয় পক্ষই যেন নিজ নিজ বক্তব্যের মাধ্যমে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাণ্ড না ঘটায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকারও আহ্বান জানান এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে

বিমান হামলা অব্যাহত থাকলেও দুই পক্ষ দুই-একদিনের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করছেন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা। লেবাননের আল-মায়াদিন টিভিকে হামাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক বলেন, আমার ধারণা যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখন যে চেষ্টা চলছে, তা সফলতা অর্জন করবে। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এ যুদ্ধবিরতি হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরাইল শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। হামাসও ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রকেট ছুড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭ জনে। এর মধ্যে ৬৪ শিশুও রয়েছে।  গাজায় যুদ্ধবিরতি পালনে আন্তর্জাতিক মহল ক্রমাগত আহ্বান জানালেও তাতে কান দিচ্ছেন না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখবে ইসরাইলি বাহিনী।

সংঘাত বন্ধে গত কয়েকদিন ধরেই ইসরাইল ও হামাসের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। বুধবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিয়েছেন বলে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়। মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় ইসরাইল ও হামাস দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে একমত হয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে। উভয় পক্ষ শুক্রবারের মধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। 

জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী গত ১০ মে থেকে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় গাজায় ৫২ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ ভবন। জেনেভায় জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র লেয়ার্কে বলেন, গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ৫৮টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি।

ইসরাইলের বিমান হামলায় ১৩২টি ভবন ধ্বংস এবং ৩১৬টি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি হাসপাতাল ও ৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া একটি নির্লবণীকরণ প্ল্যান্ট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে প্রায় আড়াই লাখ গাজাবাসী। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক ত্রাণ সংস্থা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের খাবার ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।

সেখানকার পরিস্থিতির বর্ণনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা স্কুলগুলোতে গাদাগাদি করে থাকার কারণে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকিতে আছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকাগুলোতে ইসরাইলের বিমান হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। যদিও ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলে আসছে, তারা কেবল সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে। সংস্থাটি গত সপ্তাহে লড়াইয়ে দুই পক্ষকে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু গাজার আবাসিক এলাকায় আগাম কোনো সতর্কবার্তা না দিয়েই ইসরাইল যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার তদন্ত দাবি করেছে অ্যামনেস্টি।

গাজায় ইসরাইলের এমন ৪টি প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা তারা নথিভুক্ত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে তা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির মতে, গাজায় গত ১১ মে ইসরাইলের বিমান হামলায় ২টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে ৩০ জন নিহত হয়েছে। তাদের ১১ জনই ছিল শিশু। ১৪ মে আরেকটি তিন তলা ভবনে বিমান হামলায় এক মা ও শিশু নিহত হয়। ১৫ মে  বিনা সতর্কবার্তায় আরেকটি বাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads