• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

বাংলাদেশ

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরুন

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকের বাংলাদেশ জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আজকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে সম্মান পেতে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা কারো কাছে মাথানত করে চলব না, বিশ্বসভায় মর্যাদার সাথে চলব। জাতির পিতা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।’

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বুধবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মানবতাবিরোধী কাজ করেছে, যারা এ দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে এবং তাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে- এই খুনিরা যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে, দেশকে আর যেন ধ্বংস করতে না পারে।’ 


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার আহ্বান- যারা স্বাধীনতায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করে, তারা অন্তত এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এতিমের টাকা চুরি করে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, যারা দেশের মানুষকে হত্যা করে, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, ২৭ জন আইন শৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে- এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর যে উন্নয়নের কাজ আমরা করেছি, সাধারণ মানুষের কাছে সেটা তুলে ধরতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মী যারা আছে তাদের আমি এই আহ্বান জানাবো- আপনারা গ্রামে-গঞ্জে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনগণের কাছে তুলে ধরবেন।’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেট্রো-রেল তৈরি করছি, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরি করছি, মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। একটা মানুষও আজকে কুঁড়েঘরে বসবাস করে না। জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এবং তাঁর সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গৃহায়ণ তহবিল থেকে এসব বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সভায় যারা আছেন, সারা বাংলাদেশের সবার কাছে আমার আহ্বান থাকবে এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক কোনমতে যাতে আমাদের যুব সমাজকে নষ্ট করতে না পারে। তার জন্য আপনারা সজাগ থাকবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তেমনটি জিয়া, খালেদা বা এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় হয়নি। কারণ, তারা দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করত না, তারা তো যুদ্ধাপরাধীদের নিয়েই রাষ্ট্র চালাতে চাইত। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তারা দেশের উন্নয়ন করবে কেন?’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার মৃত্যুর পর ছয় বছর পর্যন্ত তাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে থানায় মামলা করতে গেলে সে মামলা নেওয়া হয়নি। কারণ, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জিয়া জাতির পিতার বিচারের পথকে রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। উপরন্তু তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে জনগণের ওপর অকথ্য অত্যাচার হওয়ায় প্রায় ১০ লাখের ওপর মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় চেয়েছে। মানবিক কারণে তাদের সরকার আশ্রয় দিয়েছে। রিলিফ এবং থাকার ব্যবস্থাও সরকার করে দিচ্ছে।’ 


প্রধানমন্ত্রী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন আমাদের দুর্দিন ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কারণে আমাদের এক কোটি শরণার্থী ভারতের মাটিতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। সে কারণে তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি, তাদের আমরা খাদ্য দিচ্ছি।’ 


বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আজকে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের পক্ষে আছে, বাংলাদেশকে আজ তারা সম্মান ও সাধুবাদ জানাচ্ছে- কারণ, আমরা মানবতার জন্য কাজ করি ।’ 


১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর নিষিদ্ধ থাকা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং সাধারণ জনগণ বিভিন্ন বিশেষ দিবসগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাজিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য বাংলার জনগণকে স্যালুট জানাই।’ 


আজকে এই ভাষণ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিস্টারে বিশ্বের অমূল্য প্রামাণ্য দলিল হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে সমগ্র বিশ্বে বাঙালি জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ ছিল তাঁর মনের কথা এবং চিন্তা থেকে উৎসারিত।’ 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ভাষণে ২৩ বছরে বাঙালির অত্যাচার-নির্যাতনের কথা যেমন উঠে এসেছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য কী কী করণীয় জাতির পিতা তাও বলে গিয়েছিলেন।’ 


আড়াই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ, যে ভাষণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে তেমন ৪১টি ভাষণ নিয়ে ইংল্যান্ডের লেখক গবেষক জ্যাকব এফ ফিল্ডের গবেষণাধর্মী বই ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস : দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনস্পায়ার্ড পিপল’ শীর্ষক বইতেও জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 


সমাবেশে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি এবং লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম এমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি এবং দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, আওয়ামী যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি বক্তৃতা করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads