• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি: বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

বন উজাড়ে ম্যালেরিয়া ফিরছে বাংলাদেশে

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০১৮

হঠাৎ করে গত বছর দেশে বেড়েছে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে অন্তত দেড় কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে আছে। প্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। অবাধে বন উজাড় করা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর প্রকোপ বাড়ছে বলে গবেষকরা মনে করেন। এ ছাড়া অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম এলাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার আওতায় আনতে না পারাও এ রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ।

জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি ও ওষুধ প্রতিরোধী ‘সুপার ম্যালেরিয়া’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে এখনো ‘সুপার ম্যালেরিয়া’য় আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগ থাকতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে সতর্ক আছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। শরণার্থী শিবিরে এরই মধ্যে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় আজ বুধবার উদযাপন করা হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন থাকছে। আজ দুপুর ১২টায় ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন মতে, মরণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়া আবার ফিরে আসছে বাংলাদেশে। এমনকি বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও। গত বছর বাংলাদেশসহ অন্য দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমেনি। গত দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ চিত্র দেখা গেছে। কেননা গত দশ বছর ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের কার্যক্রম প্রশংসনীয় ছিল। নতুন করে প্রকোপ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মশার দেহে এক ধরনের পরিবর্তন হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। তাই ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কমছে না। গত ছয় বছরে মৃত্যুর হার ওঠানামা করলেও আক্রান্তের হার প্রায় ৫৪ শতাংশ কমেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সরকার বদ্ধপরিকর।’

ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া বিভাগের পরিচালক আকরামুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বন উজাড় হওয়ার সঙ্গে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়ানোর সম্পর্ক আছে। জীবাণুুবাহী মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে পরিবেশ পাল্টালে। এ ছাড়া জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণেও মশার সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের লেহি ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. কেলি অস্টিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ নিয়ে একটি গবেষণা হয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়,  জলবায়ু পরিবর্তন ও বন উজাড় হওয়ার কারণে পরিবেশের বস্তুগত পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশসহ ৬৭টি দেশ নিয়ে পরিচালিত গবেষণার ফল সম্প্রতি প্রকাশ করে গবেষক দল।

তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘অ্যানথ্রোপোজেনিক ফরেস্ট লস অ্যান্ড ম্যালেরিয়া প্রিভেলেন্স : অ্যা কম্প্যারেটিভ এগজামিনেশন অব দ্য কজেজ অ্যান্ড ডিজিজ কনসিকুয়েন্সেস অব ডিফরেস্ট্রেশন ইন ডেভেলপিং নেশন্স’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে এআইএমএস এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স জার্নালে।

বাংলাদেশে বন উজাড় হওয়া নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সবশেষ প্রতিবেদনে জানায়, গত ২৫ বছরে ৬৫ হাজার হেক্টর বনভূমি কমেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলাগুলোসহ ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব আছে। সীমান্তবর্তী পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়ায় বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি বেশি। প্রতিবছর দেশে মোট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ওই তিন জেলার। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলায়ও ম্যালেরিয়া দেখা গেছে।

২০১৬ সালে দেশে মোট ২৭ হাজার ৭৩৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে মারা যায় ১৭ জন। ২০১৭ সালে ২৯ হাজার ২৩৭ জন আক্রান্ত হয়। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দেড় হাজার বেশি। তবে গত বছর মারা যায় ১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত এক দশকে দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ও এতে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। গত বছর রোগটির প্রকোপ বাড়ার অন্যতম কারণ মিয়ানমার থেকে মানুষের অনুপ্রবেশ। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেশি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ২১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর মারা যায় চার লাখের বেশি। প্রতি দুই মিনিটে এক শিশু এ রোগে প্রাণ হারায়। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ায় মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় কমে এসেছে। দেশটির সরকার ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads