• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলেছ

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

ভোট টানতে মেগা প্রকল্প

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০১৮

regular_2100_news_1525796195

চলতি বছরেই পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণকাজের সময়সীমা শেষ হলেও সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। প্রায় অর্ধেক কাজই বাকি। ফলে যথাসময়ে কাজ শেষ হবে না। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় অর্থ বরাদ্দেও এর প্রতিফলন আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে আসছে অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) এতে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ কমছে ৩০৮ কোটি। পদ্মায় বরাদ্দ কমলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আট মেগা প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় তোলা হবে। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর বাকি ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা আসবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে। তবে এনইসি সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যায়ে বরাদ্দে পরিবর্তন আনতে পারেন।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহায়তা বাতিল করে ১ হাজার ৪৫২ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগামী এডিপিতে বরাদ্দ থাকবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আট বড় প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১৮ শতাংশ।

নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে ছয় মাস সময় পাচ্ছে সরকার। এ সময়ে বাড়তি অর্থ দিয়ে প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ, মেট্রোরেলে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

প্রস্তাবিত এডিপিতে অর্থ বরাদ্দে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রূপপুর। এ প্রকল্পে ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। চলতি অর্থবছর এতে বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৯০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হলে একই সঙ্গে গাড়ি ও রেল পারাপারের ঘোষণা রয়েছে। এ বিবেচনায় আগামী অর্থবছর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮১১ কোটি। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি হওয়ায় এর কাজে বেশ গতি আসবে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেতুর ৪টি স্প্যান বসেছে। ভোটের আগে সেতুটি আরো দৃশ্যমান করার চিন্তা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সম্পূর্ণ দেশি অর্থায়নে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি বছর বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। তবে নদীশাসনসহ কিছু কাজ পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নির্ধারিত মেয়াদে কতটুকু কাজ শেষ করা সম্ভব, সে বিষয়েও ধারণা নেওয়া হবে। সবকিছু বিবেচনায় প্রয়োজনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে।

মেট্রোরেল দৃশ্যমান করতে কাজ চলছে বেশ জোরেশোরেই। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক এ প্রকল্পে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা টাকার এ প্রকল্পে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালে।

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দুই অংশের যোগাযোগ সুগম করতে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজ চলমান আছে। কর্ণফুলী নদীর নিচে এ সড়ক টানেলের জন্য ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর এর জন্য বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও রামু হয়ে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ ছিল ১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী বছর বরাদ্দ বাড়ছে ৪৫০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এতে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এতে খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো বা সুবিধাদির উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে ৫০০ কোটি টাকা। ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫৫২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads